মুসলিম হয়েও গরু কোরবানি দেন না

মুসলিম হয়েও গো মাংস খান না জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন গ্রামের খানকা এ চিশতিয়া তরিকাপন্থী এক পীরের অনুসারীরা। তাই তারা গরুর বদলে কোরবানি করেন ছাগল।

মোমেন মুনি জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2017, 12:31 PM
Updated : 31 August 2017, 12:55 PM

জেলার কালাই, ক্ষেতলাল ও সদরেরর বেশ কিছু এলাকায় অর্ধ-লক্ষাধিক পীর ভক্ত রয়েছেন।সে কারণে কোরবানি সামনে রেখে জেলার হাট-বাজারে ছাগল-খাসির বাজার বেশ চড়া।

জনশ্রুতি রয়েছে, বৃটিশ শাসনামলে বেগুন গ্রামে আসেন চিশতিয়া তরিকাপন্থী পীর হযরত শাহ খাজা আব্দুল গফুর চিশতি (র.)। আব্দুল গফুরের জনহিতকর কাজে মুগ্ধ হয়ে তার তরিকা চিশতিয়াপন্থী হয়ে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মুসলিম। তবে মুসলিম হলেও গো-মাংস খান না তার ভক্তরা। সেই থেকে একই রীতি ধরে রেখেছেন তার মুরিদগণ।

একই কারণে এই তরিকার পীর ভক্তরা কোরবানিতেও গরু জবাই করেন না।

কালাই উপজেলার কর্মরত কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এটিএম সেলিম সরোয়ার খান শিপন, আতাউর রহমান, অফির উদ্দিনসহ এলাকাবাসীদের অনেকে জানান, চিশতিয়া তরিকাপন্থীদের মতে আল্লাহ ও রসুলের নৈকট্য লাভের জন্য পাক-পবিত্রসহ শরীর ও মন শান্ত রাখতে হয়। এই তরিকাপন্থীরা গরুর মাংস না খেলেও তারা তা হালাল বলেই জানেন।

এই তরিকা অনুসারীদের মতে, গরুর মাংস খেলে শরীর গরম থাকে। ফলে রাগ-ক্রোধ ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকায় জিকির-আছকারসহ ইবাদতেও নষ্ট হতে পারে একাগ্রতা। বংশ পরম্পরায় গো-মাংস না খাওয়ার ফলে এটা একটা রীতি হয়েও দাঁড়িয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃটিশ শাসনামলে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসা হযরত খাজা শাহ আব্দুল গফুর চিশতি (র.) এর অনুসারী মুরিদগণের সংখ্যা দেশে ১০ লাখেরও বেশি। আর জেলায় এ সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক।

বেগুন গ্রামের খানকা এ চিশতিয়া তরিকার পীরভক্তদের মধ্যে গো-মাংস নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা গরু কোরবানি না করলেও ভিন্ন মতালম্বীদের গো-মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে নন।

সবার সঙ্গে সহাবস্থানে শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে তারা বসবাস করছেন বলেও জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

চিশতিয়াপন্থীরা তাদের এই রীতি-রেওয়াজ অন্য কারো প্রতি চাপিয়ে দিতে চান না বলে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে তারা বেশ সমাদৃত বলেও জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা। 

এই পীরের ভক্তদের কাছে ছাগল খাসির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবার কোরবানির বাজারে দামও বেশ চড়া। প্রতিটা খাসি ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে জয়পুরহাটের বিভিন্ন কোরবানির হাটে।

স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে আসা ক্ষেতলাল উপজেলার দাশরা গ্রামের আমজাদ হোসেন, আক্কেলপুর উপজেলার চক্রপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামসহ অনেক ছাগল পালনকারী জানান, গত বছরের চেয়ে এ বারের কোরবানির বাজারে খাসি প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কমে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাহিদা থাকায় গত বছরের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি দাম দিয়ে খাসি কিনতে হচ্ছে বলে জানান চিশতিয়া তরিকা অনুসারী কালাই উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ, হারুঞ্জা গ্রামের আবুল খায়ের গোলাম মওলা, কাদিরপুর গ্রামের কামাল পাশাসহ অনেকে।