বুধবার গভীর রাতে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রনজিতপুর গ্রাম থেকে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানান বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাৎ হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ রাতেই খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজখবর এবং জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মেয়েটির বড় বোন বাদী হয়ে থানায় ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
ফহম উদ্দিন উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে মারধর ও ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই তরুণী (২৪) জানান, খুলনার তেরখাদা উপজেলার বসন্দরিতলা গ্রামে তার বাড়ি। খানপুর ইউনিয়নের উত্তর খানপুর গ্রামের বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।
মেয়েটি বলেন, শুক্রবার বোনের বাড়িতে বেড়ানে আসেন। বুধবার সন্ধ্যায় বোনের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে পাশের ফয়লাহাট বাজারে যান।সেখানে কেনাকাটা করে ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে রনজিতপুর গ্রামের কাছে তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে চেয়ারম্যানসহ আটজন তাদের গতিরোধ করেন।
“তারা আমাদের দুইবোনকে মারধর করে। পরে আমাকে ভ্যান থেকে নামিয়ে পাশের একটি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে থেকে তার সহযোগীদের আমাকে ধর্ষণ করতে বললে তারা তিনজনে ধর্ষণ করে চলে যায়।”
তিনি চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারেননি বলেও দাবি করেন।
পরে বোন স্থানীয় লোকজন নিয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে বলে জানান এ তরুণী।
মেয়েটির বড় বোন বলেন, চেয়ারম্যান শেখ ফহম উদ্দিনের বাড়ি পাশেই তাদের বাড়ি।
তার সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “২/৩ দিন আগে চেয়াম্যান ফহম বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বোনকে রাস্তায় দাঁড়ানো দেখে তার ওড়না ধরে টান দেন। এতে বোন তাকে গালমন্দ করে।
“বোন বাড়িতে এসে বিষয়টি জানালে আমি তাকে বলি- চেয়ারম্যান সাহেব হয়ত তোর সঙ্গে ফাজলামো করেছে।”
চেয়ারম্যান তার বোনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এই নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ফকির ফহম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “বুধবার রাতে আমার লোকজন নিয়ে ওই পথ দিয়ে আসার সময় ওই মেয়ে তার বোনকে দেখি। ওই পরিবারের কারণে আমার গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তাই ভ্যানচালককে ওদের ভ্যানে না নিতে গালমন্দ করলে ওরা চলে যায়।
“এরপর রনজিতপুর গ্রামের চায়ের দোকানে আমার লোকদের নিয়ে চা খেয়ে বাড়ি চলে আসি। পরে জানতে পারলাম আমার রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষরা আমাকে ও আমার সমর্থকদের ফাঁসাতে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছে।”