‘নাওয়োত মোর নাতি হইছে’

চার দিকে বানের পানি। কাজ নেই, খাবার নেই। এরই মধ্যে প্রসূতির সময় হল। মা হলেন কুড়িগ্রামের মনোয়ারা।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিআহসান হাবিব নীলু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 06:11 AM
Updated : 19 August 2017, 09:46 AM

উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চরগ্রাম দক্ষিণ বালাডোবা। এই গ্রামের আবু চান মিয়ার স্ত্রী আকলিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন তার নানি হওয়ার গল্প।

“চারদিকে বানের পানি, এর মধ্যে মোর পোয়াতি ছাওয়াকোনার প্যাটের বিষ ওঠে। মাথায় আকাশ ভাঙ্গি পইল। অ্যালা কী করি। চারদিকে অন্ধকার। ছাওয়াকোনার কান্নাকাটি দেখি নাওয়োত করি ধাত্রী আনি। পরে নাওয়োত মোর নাতির জন্ম হয়। খুশির আর সীমা নাই।

“কিন্তু অ্যালা নয়াবিপদ। বুকের দুধ পায় না মোর নাতি। খালি কান্দে আর কান্দে। পাইবে ক্যামনে, পোয়াতির তো খাওন নাই। ১০ দিন থাকি পানিত পড়ি আছি। দিন কাটে খাওয়া না খাওয়ায়। নাতি কোনাক অ্যালা ক্যামন করি বাঁচাই তোমরায় কন ব্যাহে।”

গত ৯ অগাস্ট তাদের ঘরে পানি ঢোকে। সেই পানি রাতেই বেড়ে বুকসমান। পরদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় ধাত্রীর সহায়তায় নৌকায় শিশুর জন্ম হয়। কিন্তু ঘরে খাবার নেই।

চান মিয়া বলেন, আনোয়ারার সঙ্গে দুই বছর আগে বিয়ে হয় রংপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মাহবুবার রহমানের।

“দিনমজুর জামাই আট মাসের পোয়াতি মেয়েটাকে আমাদের বাড়িতে রেখে চলে যায়। মাছ ধরে কোনো রকমে সংসার চলে অন্য দুই মেয়ে মনোয়ারা, সামিনা ও ছেলে আলাউদ্দিনকে নিয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ের সন্তান হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।

“বুকের দুধ না পেয়ে কষ্টে পড়েছে শিশুটি। প্রতিবেশীর ছাগলের দুধ আনি দুই দিন। বন্যা ভয়াবহ হওয়ায় এখন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। আমরা পড়ে আছি বাড়ির মায়ায়। খুব কষ্ট। দেখার কেউ নেই।”

আনোয়ারার বয়স প্রায় ১৮ বছর। সন্তানের নাম রেখেছেন আল-আমিন। লজ্জায় মাথা নত করে কথা বলেন আনোয়ারা। নিজে খেতে না পেলেও, ছেলে খেতে পারছে না এটাই তার বড় কষ্ট।

আনোয়ারা তার সন্তানের জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্বামীকে এখনও খবর দিতে পারেননি বলে জানালেন।

তাদের এই কষ্টের কথা শুনে সংবাদ সংগ্রহে আসা সাংবাদিকদের মন খারাপ হয়ে যায়। সামান্য অর্থসহায়তা দেন তারা।