কুচবিহারের ৬শ বানভাসি মানুষের আশ্রয় বাংলাদেশে

বাড়িতে পানি ওঠায় ভারতের কুচবিহারের বছির উদ্দিন স্ত্রীসহ আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ফজলুল হকের বাড়িতে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিআনিছুর রহমান লাডলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2017, 03:54 PM
Updated : 15 August 2017, 05:39 PM

আদিতমারীর দুর্গাপুর ইউনিয়নে ফজলুল হকের বাড়ি। হাঁটু সমান পানি নিয়ে নিজেদের কষ্টের মাঝেও ঠাঁই দিয়েছেন ভিনদেশী বন্যার্ত বৃদ্ধ বাছির উদ্দিন (৭২) ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুনকে (৬৩)।

লালমনিরহাট সীমান্ত লাগোয়া কুচবিচারের জারি ধরলা চরের বাসিন্দা বাছির।

মঙ্গলবার সরেজমিনে জানা যায়, ভারতে বন্যার কারণে গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ছয়শ লোক লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট ইউনিয়ন ও আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন।

মোগলহাট ও দুর্গাপুরের বাড়িগুলোতে মঙ্গলবার হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। যেটুকু খাবার ও জায়গা আছে তা ভাগাভাগি দিনযাপন করছে। একসঙ্গে মানুষ ও গবাদিপশুর বাস চলছে।

ভারতের জারি ধরলা চরের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা আর্জিনা খাতুন (৩৫)। তিনি তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্বামী ইকুল হককে (৪৪) নিয়ে উঠেছেন দুর্গাপুরের কুমারপাড়ায়।

হাঁস-মুরগির পাশাপাশি শখের টিয়া পাখিটিও সাথে নিয়ে এসেছেন। তাদের সঙ্গেই এসেছেন প্রতিবেশী এক সন্তানের জননী মেহেরবানী (২৩)।

মোগলহাট ও দুর্গাপুরে আসা ২০/২৫ জন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে কথা হয়েছে।

মোগলহাট ইউনিয়নের চওড়াটারীর বাসিন্দা রিয়াজুল হক (৪৪) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ তো ভাই মানুষের জন্য। ভারতীয় লোকজন জীবন নিয়ে এসেছিলেন একটু আশ্রয়ের জন্য। এ কারণেই আমার ধান শুকানোর চাতালের ফাঁকা জায়গায় কিছু লোককে আশ্রয় দিয়েছিলাম।”

মানবিক কারণ এবং সীমান্ত লাগোয়া তাদের বাড়ি হওয়ায় পূর্ব পরিচয় ছিল আমাদের কাছে আসা অতিথিদের সঙ্গে। একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করছি।”

দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান প্রামানিক বলেন, জীবন বাঁচাতে তারা এদেশে এসেছেন। তারা কোন দেশের সেটা বড় কথা নয়, প্রথমত তারাও মানুষ।

মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ছয়শ লোক মোগলহাট ও দুর্গাপুরে এসেছেন। কোথাও কোথাও পানি কমায় ২০/২৫ জন চলেও গেছেন।

“স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি মোগলহাট বিজিবি কোম্পানির সদস্যরা আশ্রয়ের সন্ধানে আসা ভারতীয়দের প্রবেশে বাধা দেয়।

“পরে আমি লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অনুরোধ করার পর তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেন।”

লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় ছয়শ ভারতীয় নারী-শিশু ও পুরুষ লোকজন বাংলাদেশে এসেছে। ধরলা নদীর ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।