কিন্তু বন্যায় এই গরু এখন শাখের করাত হয়েছে কুড়িগ্রামের এই কৃষকের; নিজেদের ঘরই ডুবে গেছে, গরু রাখবেন কোথায়? আবার এই দুর্যোগে অর্ধেক দামেও কেউ কিনতে চাচ্ছেন না।
“সব আশা শেষ,” মান্নানের মতো দীর্ঘশ্বাস এখন উত্তরাঞ্চলের অনেক কৃষকের; ওই অঞ্চলের কয়েক লাখ বানভাসি মানুষ এখন নিজেরাই আশ্রয় খুঁজছেন, গরু কিনবেন কে?
কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের দুই পাশে, কুড়িগ্রাম-শুলকুর বাজার রোড এবং পাঁচগাছি ওয়াপদা বাঁধে অনেকের সঙ্গে উঠেছেন উত্তর নওয়াবেশ গ্রামের মান্নান। সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের সঙ্গে আটটি গরু।
মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
নিজেরা বৃষ্টিতে ভিজলেও গরুগুলো যেন না ভেজে সে জন্য পলিথিন দিয়ে তাঁবু খাটিয়েছেন তিনি।
প্রতিটি গরু বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়ার আশা ছিল তার।
“এখন অর্ধেক দামেও কেউ কিনতে চাচ্ছে না। বিক্রিও করতে পারছি না, আবার খাওয়াতেও পারছি না,” বলেন মান্নান।
এই বর্ষায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে এখন কুড়িগ্রাম। আগের বন্যায়ই সব খড় নষ্ট হয়ে গেছে মান্নানের।
“এখন ভরসা খাবার কিনে খাওয়ানোর। সে সামর্থ্যও নেই। না খেতে পেয়ে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে,” দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বলেন তিনি।
তার মতো আরও কৃষকরা বলেন, তারা গরু-ছাগল লালন-পালন করেছেন আগামী মাসের ঈদকে সামনে রেখে। এখন না পারছেন গরু বিক্রি করতে, না পারছেন রাখতে। চোরের ভয়ে রাত জেগে গরু পাহারাও দিতে হচ্ছে।
খোলা আকাশের নিচে এখন গবাদি পশুর সঙ্গে মিলেমিশে বাস আরও অনেকের।
নিরাশ্রয় কাশেম আলী তিনটি, আমির হোসেন চারটি, সাবের আলী ছয়টি, মহামুল পাঁচটি, বাবুল মিয়া সাতটি গরু নিয়ে এখন বাঁধে আশ্রয়ে।
তাদের সবারই এক কথা-নিজেদেরই খাবার নেই গরুকে কী খাওয়াব?