একমাত্র শুকনা ভিটা খগেনের

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার এক গ্রামে একটি মাত্র বাড়ি ছাড়া প্লাবিত হয়েছে পুরো গ্রাম।

আহসান হাবীব নীলুকুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2017, 02:18 PM
Updated : 15 August 2017, 02:57 PM

উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর অনন্তপুর গ্রামে প্রায় সবার ঘরেই হাঁটু পানি। শুধু খগেন্দ্রনাথের ভিটায় পানি না উঠলেও নেই থাকার মত কোনো ঘর। বেসরকারি একটি সংস্থার ছাগলের জন্য করে দেওয়া ঘরে ছেলে-বউ ও নাতি নাতনি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ছকিনা বেওয়া (৬৫)।

ছোট ওই ভিটায় আশ্রয় নিয়েছে গ্রামের আরও সাতটি পরিবার। ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ২২ শিশু; যাদের খাদ্য নেই।

আশ্রয় নেওয়া রহিমা বেগম, আয়না রাণী, ছকিয়ত আলী ও রফিকুল বলেন, তাদের খাওয়া দাওয়া নেই। এক বেলার খাবার তিন বেলা ভাগাভাগি করে খেতে হচ্ছে। তার উপর রোদ-বৃষ্টি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ খোঁজ নেয় না বলে জানান তারা।

ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ওয়ার্ডের ১০টি গ্রাম। শ্যামপুর, ভাটিগ্রাম, কুমারপাড়া, উচাভিটা, নয়াগ্রাম, কাচারিয়ারঘাট, টসাপাড়া, চৌরাপাড়া, রামরামপুর ও বালার চর। সবকটি গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। রাস্তা, বাঁধ ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

“কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে ঘরের মধ্যে চালা করে আছে। কেউ কেউ পাশ্ববর্তী স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। ওয়ার্ডের এক হাজার ১০২টি পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত ত্রাণ পায়নি। ঘরে ঘরে খাদ্য সংকট। নেই বিশুদ্ধ পানি।”

সোমবার উচাভিটা গ্রামের আব্দুস সোবহান (৪৪) মারা গেছেন। তাকে দাফনের মত শুকনা জায়গা না থাকায় আত্মীয় বাড়িতে লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান এ ইউপি সদস্য।

চরগুজিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ১৫টি পরিবার। স্কুলের ভেতরেও পানি ওঠায় চৌকির ওপর থাকতে হচ্ছে তাদের।

জ্বালানি সংকটের কথা জানান আশ্রয় নেওয়া বিউটি বেগম।

তিনি বলেন, পানিতে বসে রান্না করায় হাতে পায়ে চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে।

আব্দুল (৬৫), কাশেম আলী (৭০),আমিনা বেগম (৬০) জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১৫ দিনের মাথায় আবার বন্যায় তারা চরম বিপদে পড়েছেন। খাওয়া ও থাকার কষ্ট বড় কষ্ট।

হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ইউনিয়নের নয় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই দফায় ছয় মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও তিন মেট্রিক টন চাল ও ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার পাওয়া গেছে। এসব বিতরণ হয়নি।

৩ নম্বর ওয়ার্ড দুর্গম হওয়ায় এবং বরাদ্দ কম থাকায় ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

তাছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে হাতিয়া প্রবেশের একমাত্র সড়কের চৌমোহনী সেতু এলাকায় রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সবার হাতে ত্রাণ পৌঁছানো হবে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই।