বাড়ছে উত্তরের নদ-নদীর পানি

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধাসহ উত্তরের কয়েকটি জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে চলছে। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামের প্রায় ৬০ হাজার ও নীলফামারীর চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2017, 02:49 PM
Updated : 12 August 2017, 10:19 PM

শনিবার কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি ৯৩ সেন্টিমিটার, গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫১ সেন্টিমিটার এবং নীলফামারীতে তিস্তার পানি ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৯৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

“ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ নদীর পারি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৬ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ”

পানি বাড়ার কারণে জেলার দেড় শতাধিক চর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।  প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বলেন,  “ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার ফলে আমার ইউনিয়নের ১০টি চরের প্রায় দেড় হাজার ও ভগবতিপুরে প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে।” 

ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, মানুষ ও গবাদি পশু উদ্ধার তৎপরতা চলছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় রাতের মধ্যে শুকনো খাবার সরবরাহ শুরু হবে।

উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, গত দুদিন পানি বাড়ার ফলে চরগুঁজিমারী, অনন্তপুর, নয়ডারা, গাবুরজান, শ্যামপুর, বাবুরচরসহ বিভিন্ন চরে ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

একই অবস্থা সদরের ঘোগাদহ, উলিপুরের সাহেবের আলগা, চিলমারীর অষ্টমীরচর, নয়ারহাট, রৌমারীর শৌলমারী, বন্দবেড় ও রাজীবপুরের কোদালকাটিসহ কয়েকটি ইউনিয়ন, বলেন চেয়ারম্যান আবুল।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, “বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে তিনশ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লাখ টাকা মজুদ আছে।

“শিগগিরই বন্যা কবলিত মানুষকে বরাদ্দ দেওয়া শুরু হবে। ঢাকায় ত্রাণ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে চাহিদা মাফিক ত্রাণ সহায়তা আসবে ।”    

নীলফামারী প্রতিনিধি

টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য  ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় মাইকিং করে সর্তক করা হয়েছে।

টানা তিনদিনের বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকালে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে এবং দুপুরে কিছুটা কমে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের  হাইড্রোলজি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান,  বিকালের পর থেকে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে রাত সাড়ে ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।  রাতে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর  ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নদীর বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস হুমকির মুখে পড়েছে। পানির তোড়ে যে কোনো সময় এটি বিধ্বস্ত হতে পারে।

পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্মকর্তারা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক খালেদ।

তিনদিনের টানা বর্ষণে শহরেরর বাবুপাড়া, প্রগতিপাড়া, সওদাগড়পাড়া, শাহীপাড়া, হাড়োয়াসহ প্রায় দুই শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে।

সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী চৌধুরী জানান, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এখানকার ইছামতি ধাইজান নদীর পানি উপচে ইউনিয়নের কুন্দপুকুর, পাটকামুড়ি, ধরধরার পাড় গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

ওই ইউনিয়নের পাটকামুড়ি গ্রামের আসগার আলী বলেন, “গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর ধারে আমার বাড়ি। গত কয়েক দিনে বৃষ্টিতে আমার বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। আমার গ্রামের অর্ধশতাধিক বাড়িতে এখনও হাঁটু পরিমাণ পানি বিরাজ করছে।”

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, গত বুধবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মোট ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া, ঘাঘট, তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

“ব্রহ্মপুত্রের পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ”

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

“দিনাজপুরের পূণর্ভবা নদীর পানি ৩৩ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর পানি ৩৯ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ”

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বলেন, দিনাজপুর সদর, বিরল, খানসামা, বীরগঞ্জ, পার্বতীপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বীরগঞ্জে তিস্তা নদীর তীর এলাকা থেকে বেশ কিছু পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, “শনিবার যমুনার পানি প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ”