বন্যার ক্ষত মৌলভীবাজারের সড়কে

ভারি বর্ষণসহ বন্যায় মৌলভীবাজারে বেশির ভাগ রাস্তা প্রায় চার মাস ধরে পানির নিচে থাকায় ভেঙেচুরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 07:40 AM
Updated : 25 July 2017, 07:44 AM

জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম জানান, যেসব রাস্তায় পানি কিছুটা কমেছে সেখানকার হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৮৬ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়েছে, ১২টি সেতুর মূল গার্ডারের মাটি সরে গেছে। এসবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে এখনও বেশির ভাগ রাস্তা পানির নিচে রয়েছে। সেসব ক্ষয়ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পানি কমার পর সেগুলো হিসাব করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ।

বন্যার কারণে প্রায় সব রাস্তার মাটি কমবেশি সরে গেছে। বহু জায়গায় পিচ ধুয়ে খোয়া উঠে গেছে।

জেলা দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী জানান, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিনি শত শত কিলোমিটার রাস্তা এখনও পানির নিচে দেখেছেন। বেশির ভাগেরই মাটি ধুয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বড়লেখা সড়কে পানি কিছুটা কমার পর অল্প কিছু যান চলাচল করছে। তবে ভাঙন এলাকায় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হওয়া গাড়ির যাত্রীরা পানিতে নেমে ধাক্কা দিয়ে উঁচু জায়গায় তুলছেন। তারপর কোনো কোনো গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে, কোনো কোনোটা আর চলছে না।

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম জানান, রাস্তা ভেঙে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তার উপজেলার মানুষ।

“ঢাকা-বড়লেখা সড়কের বিভিন্ন অংশ থেকে পানি নেমে গলেও বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙে রাস্তার ওপর পুকুরের মতো হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় এখনও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও মানুষ বিপদে পড়ে। অনেক জায়গায় ওই অংশ নৌকায় পার হতে হয়। কোথাও কোথাও স্থানীয়রা তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো।”

বিভিন্ন গ্রামের প্রায় সব রাস্তা কমবেশি ভেঙে যাওয়ায় পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই বলে তিনি জানান। বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুর রহমান সুন্দর ও কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানও একই তথ্য দিয়েছেন।

কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর-ভুকশীমইল রাস্তা ও ভুকশীমইল-কুলাউড়া রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা ভেঙে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর হাকালুকির ঢেউয়ে প্রতিনিয়তই রাস্তার অবশিষ্ট অংশ ভেঙে যাচ্ছে।

জুড়ি, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর দিয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সেসব এলাকার বাসিন্দারা।

রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অনেক জায়গায় ট্রাক্টরে চলাচল করতে দেখা গেছে।

পানি কমার পর স্কুল-কলেজ খুললেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না হওয়ায় দূরের শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না।

এসব খবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম।

তিনি বলেন, বন্যায় ও বর্ষণে ক্ষতির পাশাপাশি এখন হাওরের ঢেউ এসে রাস্তা ভেঙে দিচ্ছে।

“আমরা বাঁশের গড় দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছি। আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”