‘শতবর্ষী’ গাছ রেখেই চার লেন হচ্ছে যশোর-বেনাপোল সড়ক

দুই পাশের ‘শতবর্ষী’ গাছগুলো না কেটেই চার লেনে উন্নীত হবে যশোর-বেনাপোল সড়ক; যা এক সময় যশোর রোড নামে পরিচিত ছিল।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2017, 11:40 AM
Updated : 20 July 2017, 11:40 AM

একাত্তরে এই সড়ক ধরেই ভারতে যায় হাজার হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী। আর এ সড়ক ধরে শরণার্থীদের ঢল নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালান গিন্সবার্গ লিখেন বিখ্যাত সেই কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’।

সম্প্রতি সড়কটি পুনর্নির্মাণের নির্দেশনা পেলেও মন্ত্রণালয় থেকে গাছ না কাটার আদেশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি ইকবাল বলেন, “গাছ না কেটে মহাসড়কটির পুনর্নির্মাণের জন্য সম্প্রতি মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। সে মোতাবেক কাজ চলছে। আশা করি দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করতে পারব।”

সড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

যশোর থেকে বেনাপোল শূন্যরেখা পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার রাস্তা দুই লেন এবং দুই দশমিক ৩১ কিলোমিটার চার লেনবিশিষ্ট।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ৩২৮ কোটি ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে দড়াটানা থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পুনর্নির্মাণ করা হবে। সড়কটির দুই পাশ ৩ মিটার প্রশস্ত করা হবে। এজন্য সড়কের দুই পাশের ২ হাজার ৩১২টি গাছ কাটা পড়ার ঝুঁকিতে ছিল।

২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর ‘যশোর-বেনাপোল রোড: গাছ রেখেই ৪ লেন করার দাবি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তখন গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেই এ মহাসড়ক চার লেন করার দাবি জানিয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ এলাকাবাসী।

যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় অংশের এই রোডটি চার লেনের। ওখানে শতবর্ষী গাছগুলো সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে চার লেনের মাঝখানে। গাছগুলো রাস্তার সৌন্দার্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গাছ রেখে রাস্তা করার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবমুখী এবং জনবান্ধব বলে মন্তব্য করেন এ সংসদ সদস্য।

যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যশোর-বেনাপোল সড়কের দুইপাশের শতবর্ষী গাছগুলোকে রেখেই চার লেন করার সরকারি সিদ্ধান্তে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।

“মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি শরণর্থীরা রাস্তার দুধারের গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। তাই ইতিহাসের সাক্ষী ওই গাছগুলো যেকোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”

সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি 'যশোর রোড' নামকরণ করার দাবি জানান শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু।

তিনি বলেন, “সড়কটিকে যশোর রোড নামকরণ করলে আমাদের মর্যাদা বাড়বে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে যশোর অঞ্চলে কালী প্রসন্ন রায় নামে এক জমিদার ছিলেন। তাকে সবাই কালি পোদ্দার নামে চিনত।

“১৮৪০ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদীয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। তার ব্যবস্থাপনায় হাজার হাজার শ্রমিক দিন-রাত কাজ করে ১৮৪২ সালে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করে।

“স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকে এটি যশোর রোড নামে পরিচিত। ভারতীয় অংশে সড়কটির নাম এখনও যশোর রোড।”