লোকসানে ধুঁকছে জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প

কখনও আশাতীত লাভ আবার কখনও পুঁজি হারানোর দশা। এভাবেই চলছে জয়পুরহাটের প্রায় ১০ হাজার মুরগির খামার।

মোমেন মুনি জয়পুরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 12:24 PM
Updated : 17 July 2017, 09:43 AM

এ অস্থিতিশীলতার কারণে এ শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে থাকা অর্ধলক্ষাধিক মানুষের জীবিকায় রয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ শিল্পকে নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জামালগঞ্জ সরকারি হাঁস-মুরগি খামারকে কেন্দ্র করে এ জেলায় পোল্ট্রি জোন গড়ে ওঠার পর দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নানা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে এ শিল্পকে।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, সত্তর/আশির দশক থেকে জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পের জয়যাত্রা শুরু হয়; আর এর বিপ্লব ঘটে নব্বইয়ের দশকে। বর্তমানে জেলায় আড়াই হাজার নিবন্ধিত খামারসহ ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার মুরগি খামার রয়েছে। আকার-আয়তন ভেদে এই খামারগুলোতে দুই হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার পর্যন্ত মুরগি রয়েছে। খামারগুলোতে বছরে সোনালী জাতের মুরগি ৪ ব্যাচ, ব্রয়লার-৬/৭ ব্যাচ এবং খাবার ও বাচ্চা ফোটানোর ডিমের জন্য হাইব্রিড লেয়ার জাতের মুরগি সারা বছর পালন করা হয়। এ জাতের মুরগি বছরে ৩০০টিরও বেশি ডিম দেয়। আবার ডিম দেওয়ার ক্ষমতা শেষ হলে সেগুলো মাংসের জন্য বিক্রি করা যায়।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আরও জানায়, জেলায় প্রতি মাসে খামারগুলো থেকে গড়ে এক কোটিরও বেশি ডিম ও ১০ হাজার মেট্রিক টন মাংস উৎপাদিত হয়। এতে জেলার ১০ লাখ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করার পরও প্রতিদিন ট্রাক ও পিক-আপ মিলে ১৫/২০ গাড়ি মুরগি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির বাচ্চার চাহিদা পূরণ করতে জয়পুরহাটে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সরকারি একটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩৯টি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে। এসব হ্যাচারিতে প্রতি সে একদিন বয়সের প্রায় চল্লিশ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব হ্যাচারি থেকে এক দিনের তিন কোটি ২০ লাখ বাচ্চা উৎপাদন করা হয়েছে বলে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়।

জয়পুরহাট পূরবী এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লি.- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক, পল্লী ফিড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন জাহাঙ্গীরসহ মুরগি খাদ্য প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় বহু সংখ্যক পোল্ট্রি খামার গড়ে ওঠার কারণে এখানে বর্তমানে মুরগি খাদ্য কারখানা গড়ে উঠেছে ১১টি, যেখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে। উৎপাদিত এসব খাদ্য দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে প্রতিমাসে আসে প্রায় তিন কোটি টাকা। 

জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুস্তম আলী ও জামালগঞ্জ সরকারি পোল্ট্রি ফার্মের সহকারী পরিচালক হুমায়ন কবীর জানান, এখানে পোল্ট্রি শিল্প প্রসার লাভের কারণগুলোর মধ্যে জামালগঞ্জ সরকারি পোল্ট্রি খামার স্থাপিত হওয়ার পর থেকে জয়পুরহাট ও পার্শ্ববর্তী জেলা নিয়ে পোল্ট্রি জোন গড়ে ওঠা, শুরুর দিকে আশাতীত লাভের জন্য বেকার যুবকসহ ব্যাবসায়ীদের পোল্ট্রি ব্যবসার প্রতি আগ্রহ, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এলাকায় খড়া-বন্যা না থাকা উল্লেখযোগ্য।

পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক আনু, শেফালী পোল্ট্রি ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলম, ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারের মোল্লা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির মালিক হাইকুল ইসলামসহ পোল্ট্রি শিল্পে সংশ্লিষ্টদের অনেকে জানান, সারা দেশে ব্যাপক পরিচিত সোনালী জাতের মুরগির জন্মস্থান জয়পুরহাটে, এর নামকরণ করেন জামালগঞ্জ সরকারি হাঁস মুরগি খামারের সাবেক সহকারী পরিচালক শাহ জামাল এবং এ জাতের মুরগির প্রথম উৎপাদনকারী পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক আনু।

পদ্মা পোল্ট্রি ফিড অ্যান্ড চিকস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক রাশেদুজ্জামান রাশেদ ও টিআরবি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী কবীর আকবর তাজ চৌধূরী বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের দিকে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণের পর নিবন্ধিত খামার মালিকরা সরকারি সহায়তা লাভ করলেও সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় অনিবন্ধিত খামারীদের অনেকেই দেউলিয়া হয়েছেন।

এছাড়া হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সহস্রাধিক মুরগি খামারী, হ্যাচারি মালিক, খাদ্য কারখানা মালিকসহ পোর্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিকরা প্রায় একশ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন বলে তাদের দাবি।

এছাড়া কখনও আশাতীত লাভ আবার কখনও ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন পোল্ট্রি শিল্পে জড়িতরা। নানা সমস্যার কারণে এই শিল্পে এমন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে বলে তারা মনে করেন।

পোল্ট্রি শিল্পে তারা আটটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন।

এগুলো হলো:১.কাঁচামালের শতকরা ৮০ ভাগ আমদানি নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেমি হওয়ার কারণে আমাদের দেশে উৎপাদিত মুরগি রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আমাদের দেশের বড় বড় হোটেলগুলোও বিদেশে উৎপাদিত মুরগি আমদানি করছে। রপ্তানি না হওয়ার কারণে দেশের মধ্যেই মুরগি ও ডিমের বাজার সীমিত রয়েছে।

২.উন্নত দেশে একটি শেড থেকে অন্যটির দূরত্ব কমপক্ষে এক কিলোমিটার। আমাদের দেশে দূষিত পরিবেশে গাদাগাদি করে মুরগির শেড স্থাপন করা হয়ে থাকে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি খামারগুলোতে রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ দেখা যায়।

৩.ভোক্তাদের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদানের সামঞ্জস্য না থাকায় কোনো সময় ভালো লাভ হলেই এরপর থেকে পুরাতন খামারীদের বেশি করে মুরগি পালনের পাশাপাশি নতুন নতুন খামারীরাও ঝুঁকে পড়ে এই পেশায়। ফলে স্বাভাবিক কারণে বাজার দর নিম্নমুখী হয়।

৪.বর্তমানে দেশি-বিদেশি অগণিত কোম্পানি মুরগির খাদ্য, রোগ প্রতিরোধক ওষুধ ও ভিটামিন বাজারজাত করছে, যাদের মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বা মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নিম্নমানের খাদ্য, ওষুধ ও ভিটামিন খাওয়ানোর ফলে রোগ-ব্যাধি মুক্ত না হয়ে বরং মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায় বা নির্ধরিত সময়ের মধ্যে সঠিক ওজন প্রাপ্ত হয় না।

৫.খাদ্য, রোগ প্রতিরোধক ওষুধ ও ভিটামিনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দিন দিন খামারীদের লাভের অঙ্ক জটিল হয়ে পড়ছে। দুই বছর আগের মূল্যের চেয়ে বর্তমানে মুরগির খাদ্য, রোগ প্রতিরোধক ওষুধ ও ভিটামিনের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হলেও মুরগি ও ডিমের বাজার দরে ওঠানামা লেগেই আছে। 

৬.প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে অতিবৃষ্টিসহ বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে স্বাভাবিক কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার মুরগি ও ডিম সরবরাহ বন্ধ ব্যাহত হয়। সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার ফলে পরিবহন ব্যাহত হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাংসের মুরগি ও ডিম সরবরাহ কমে গেছে।

৭.মৌসুমি ফসল ও ক্রয় ক্ষমতার উপর মুরগি ও ডিমের বাজার ওঠানাম করে। বর্তমানে চালের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে  মাংসের মুরগি ও ডিমের বাড়তি চাপে ঘটেছে দরপতন।

৮.মধ্যস্বত্বভোগী ফরিয়া বা দালালদের দৌরাত্ব্যের কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজার মূল্যের বিস্তর পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্বল্প পূঁজি বিনিয়োগ করে তাদের ভালো মুনাফা হলেও ব্যাংক থেকে চড়া সুদে বেশি পূঁজি বিনিয়োগ করেও লোকসান গুণতে হয় অনেক সময়।

এসব তথ্য জানিয়ে তারা বলেন, একদিনের বাচ্চা খামারগুলোতে এনে মাংসের জন্য উৎপাদন করতে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে সোনালী জাতের মুরগির ওজন আসে ৬/৭শ গ্রাম।  মাংশের জন্য প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা খরচ হলেও খামারীরা ২/৪ টাকা কমবেশি পাচ্ছেন, সেখানে খুচরা বাজার মূল্য কেজি প্রতি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। সোনালী জাতের মুরগি উৎপাদনে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা খরচ হলেও খামারীরা লোকসান দিয়ে পাচ্ছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আর  খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

জয়পুরহাট শহরের সাহেব বাজারের মফিজুল ইসলাম, কালাই পৌর শহরের তানভীর হোসেন, পাঁচবিবি পৌর শহরের আব্দুল হাকিমসহ খুচরা মুরগি ও ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ফরিয়াদের কাছ থেকে মুরগি নিয়ে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা লাভে বিক্রি করেন।

এদিকে, বর্তমানে মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণ বাকিতে বেচা-কেনা হওয়ার নানা কূফলও তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, শুধু একটি মুরগির শেড থাকলেই ওইসব খামারীকে বাকিতে সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের পর মুরগি সুস্থ হওয়াসহ বাজার মূল্য স্বাভাবিক থাকলে মূল্য ফেরতের সম্ভাবনা থাকলেও নানা কারণে দরপতন ঘটলে হ্যাচারি মালিক, খাদ্য ব্যবসায়ীদের খাতায় বকেয়ার পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি দেনাদার খামারীদের তালিকাও দীর্ঘ হয়ে পড়ে। এসব কারণে গত পাঁচ বছরে ১১টি খাদ্য কারখানা, ৩৯টি হ্যাচারিসহ খাদ্য ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের হিসাবের খাতায় একশ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রয়েছে বলেও জানান তারা।

জামালগঞ্জ এলাকার আবু ছায়েম, ছানোয়ার হোসেনসহ মাঝারী ধরনের অনেক খামারী জানান, প্রতিমাসে তারা নিজস্ব শেডে প্রতিপালন করেন দুই থেকে চার হাজার মুরগি। গেল দুবছর আগেও মুরগি প্রতিপালন করে মাসে তাদের আয় হতো ১০/১৫ হাজার টাকা।  কিন্তু গত ২ মাসে তাদের লোকসান হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

জামালগঞ্জের পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুরের সততা পোল্ট্রি ফার্মের খামারি মিল্টন হোসেন ১২ হাজার মুরগি দুই মাস প্রতিপালনের পর প্রায় তিন লাখ টাকা ও একই এলাকার আনোয়ার হোসেন মিথুনের চার হাজার মুরগিতে দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান।

সদরের পুরানাপৈলের খামারি আবু সাঈদ, রবিউল ইসলাম বাবু বলেন, চাহিদা ও মূল্য না থাকার পাশাপাশি খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রলে তদারকি না থাকার কারণেও তাদের লোকসান হচ্ছে।

দুই মাস খাদ্য খাওয়ানোর পর মুরগির ওজন ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম হওয়ার কথা থাকলেও মুরগির ওজন মিলছে ৬০০ থেকে ৬৫০ গ্রাম।

ফলে গত মাসে দুই হাজার মুরগি বিক্রি করে আবু সাঈদের লোকসান হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।

শহরের দেবীপুর এলাকার নাসিমা পোল্ট্রি খামারের মালিক ফিরোজ হোসেন বলেন, আগে মুরগি কেনার জন্য খামারিদের কাছে ব্যবসায়ীরা ঘুরত। এখন বাকিতে মুরগি বিক্রি করার জন্যও ব্যবসায়ীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আক্কেলপুর উপজেলার পূর্ব রুকিন্দিপুর গ্রামের খামারি শাহাদৎ হোসেন বলেন,তার খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার সোনালী জাতের মুরগি রয়েছে। যেভাবে বাজার পড়ে গেছে তাতে এ অবস্থা থাকলে তাকে বিপুল অংকের টাকা লোকসান গুণতে হবে।

জয়পুরহাট পদ্মা ফিডস অ্যান্ড চিকস্ লিমিটেডের পরিচালক রাশেদুজ্জামান, জয়পুরহাট বিসিক শিল্প নগরীর কিষাণ হ্যাচারির ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলামসহ হ্যাচারি ও পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বাচ্চা ফোটানোর জন্য প্রতিটি লেয়ার ডিমের উৎপাদন খরচ ৭/৮ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়, প্রতিটি মুরগি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ১৪/১৫ টাকা হলেও হ্যাচারি মালিকরা ৭/৮ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করেন তারা। এ বাচ্চাগুলো তো গুদামজাত করা যায় না। যেদিন উৎপাদন হয় সেদিনই পোল্ট্রি খামার মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু চাহিদা না থাকায় বিপুল সংখ্যক একদিনের উৎপাদিত বাচ্চা নিয়ে তাদের মতো মহাবিপাকে পড়েছেন অনেক হ্যাচারি মালিক। এতে  লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে জানান তারা।

জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সতাপতি ও কিষাণ পোল্ট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হক জিয়া বলেন, মুরগি খামার, হ্যাচারি ও ফিডমিলসহ এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

জয়পুরহাট বিসিক শিল্পনগরীর কিষাণ হ্যাচারির পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, জেলায় ছোট বড় পোল্ট্রি খামার, হ্যাচারি, মুরগির খাদ্য কারখানা, ওষুধ-খাদ্য ও উপকরণ দোকানসহ জেলায় প্রায় ১২ হাজার পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় অস্থিরতার যাঁতাকলে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প। এ অবস্থায় পোল্ট্রি শিল্পের অব্যাহত লোকসানের কারণে পুঁজি হারাতে বসেছেন জেলার হ্যাচারি মালিক ও পোল্ট্রি খামারীরা।

পোর্ট্রি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, আর্থিক সম্ভাবনাময় এ শিল্প রক্ষা করতে এখানে মুরগির মাংস প্রসেসিং প্লান্টসহ হিমাগার প্রয়োজন। এ ছাড়া শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি ভর্তুকিসহ রপ্তানির জন্য সরকারের পদক্ষেপ আশু প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুস সালম সোনার বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এসব খামারকে ঘিরে জয়পুরহাটসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে সরাসরি প্রায় পঞ্চাশ হাজার আর পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক বেকার যুবক-যুবতীর। তাই জয়পুরহাটে পোর্ট্রি শিল্পের প্রসার লাভ করছে।