শনিবার গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। তাছাড়া তিস্তার পানি বিদৎসীমার নিচে রয়েছে। কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমলেও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গাইবান্ধা
ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কমতে শুরু করায় গাইবান্ধার চারটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী চন্দ্র শেখর জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
শুক্রবার দুপুর ও রাতে সিংড়া রতনপুর বাঁধে গর্ত দিয়ে পানি বের হতে থাকে। ফলে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কে পড়েন স্থানীয়রা। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালি ও মাটির বস্তা ফেলে গর্তগুলো মেরামত করে।
১৯৬২ সালে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে পাবনার বেড়া পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে নির্মাণ করা হয় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণের পর এই বাঁধে আর কোনো সংস্কার করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতি বছর বন্যা, বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়রা ইচ্ছেমতো বাঁধ কেটে বসতি গড়ে তোলায় এখন করুণ দশা।
সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা অংশে গোটা বাঁধ জুড়ে গড়ে উঠেছে বসতি। কোনো কোনো স্থানে হাটবাজারও গড়ে উঠেছে। দফায় দফায় নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, গত বছর ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার কমপক্ষে ২০ হাজার পরিবার আবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এবারও বাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে।
“কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারি নেই। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙে গেলে জেলা সদরের সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।”
“বাঁধের বেশকিছু জায়গায় ইঁদুর গর্ত করেছিল। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে সব গর্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
বাঁধ সংস্কারের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি কমতে শুরু করায় গো-ঘাট এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ভাঙনের শুরু থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলার কাজ করছে। কিন্তু কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে সবকটি নদ-নদীর পানি। এর ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
শনিবার ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমলেও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভাঙনে গত দুদিনে রাজীবপুরের কোদালকাটি, রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, চিলমারীর নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
দর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, ধরলা নদীতে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গের নওয়াবশ ও দক্ষিণ কদমতলা গ্রামে প্রায় ২৫টি বাড়ি স্থানান্তরিত হয়েছে।
কোদালকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, এবার ভাঙনে তার ইউনিয়নে এক হাজার ৬৬০টি বাড়ি ভেঙে গেছে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যা কবলিত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। চাহিদা মোতাবেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।