অস্ত্রোপচারে শিশুর মৃত্যু: চিকিৎসকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রংপুরে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসকসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2017, 01:19 PM
Updated : 12 July 2017, 01:22 PM

নগরীর আর কে রোড ইসলামবাগ এলাকায় ভিআইপি জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে আড়াই বছর বয়সী মিত্তা জাহান মৃধার মৃত্যু হয় বলে জানান কোতোয়ালি থানার এসআই মহিবুল আলম।

মিত্তা মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের মহমুদুল হাসান মৃধার মেয়ে।

ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা পলাতক থাকায় সেখানে তালা ঝুলিয়ে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মাহমুদুল হাসান মৃধা বাদী হয়ে বুধবার বিকালে মামলা করেন।

মামলায় অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিরম্ব কুমার রায়, অ্যানেস্থেসিস্ট ডা. বিপ্লব, নার্স ববিতা রায়, ওয়ার্ডবয় আতিকুল ইসলাম ও আশুতোষ রায়, আয়া কবিতা বেগম ও জ্যোৎস্না বেগম এবং এক দালালকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ নার্স ববিতা রায়, ওয়ার্ডবয় আতিকুল ইসলাম, আশুতোষ রায়, আয়া কবিতা বেগম ও জ্যোৎস্না বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।

মাহমুদুল মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অ্যাবডোমিনাল হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত আমার মেয়ে মিত্তাকে ৯ জুলাই রাতে ভিআইপি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাই।

“হার্নিয়া অপারেশনের জন্য মঙ্গলবার রাত ৯টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন করেন মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিরম্ব কুমার রায়।

“রাত সাড়ে ১১টায় মেয়েকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে স্থানীয় প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন ডাক্তার হিরম্ব। সঙ্গে আমিও যাই।সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান দুই ঘণ্টা আগেই মেয়ে মারা গেছে।”

এরপরে হাসপাতালের কর্মচারীরা লাশ নিয়ে এলে চিকিৎসক ও নার্স আয়ারা চলে যান বলে জানান তিনি। 

পুলিশ রাতেই শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।

লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনকারী এসআই মহিবুল আলম বলেন, লাশের নাভির ওপরে ২ ইঞ্চি কাটা দাগ ছাড়া শরীরে অন্য কোথাও ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  

এ ব্যাপারে হিরম্ব কুমার রায় বলেন, “জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া করেছেন ডা. বিপ্লব। অপারেশন ঠিকমতই করা হয়েছে। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া করার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শিশুটির জ্ঞান ফিরছিল না।

“এ হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় তাকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ফিরিয়ে দেন। হাসপাতালে ফিরিয়ে আনার পর শুনতে পাই শিশুটি মারা গেছে।”

তবে অ্যানেস্থেসিস্ট বিপ্লবের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন জাকিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি জানার পর হিরম্বকে তার মোবাইলে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে যেটা জানিয়েছে তা হল, ‘অপারেশন ঠিকমতই হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুটি জ্ঞান ফিরে না আসায় তাকে প্রাইম হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে গ্রহণ করেনি। পরে শিশুটি মারা যায়’।

“জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু অ্যাবডোমিনাল হার্নিয়া অপারেশনের ক্ষেত্রে জেনালের অ্যানেস্থেসিয়া করতেই হবে।”    

ভিআইপি জেনালের হাসপাতালের পরিচালক লিটন দাস বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সে কারণে হাসপাতালে যাচ্ছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”