বিপৎসীমার উপরে উত্তরের নদ-নদী, পানিবন্দি ৩ লাখ

উত্তরের তিন জেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা, ঘাঘট ও দুধকুমাররসহ অন্য নদীর পানিও রয়েছে বিপৎসীমার কাছাকাছি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2017, 03:58 PM
Updated : 10 July 2017, 04:36 PM

নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে এসব এলাকার ২২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন বন্যার্তরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

নীলফামারী

ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকার ৩০টি গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, সোমবার তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ব্যারাজের ৪৪টি কপাট খুলে রেখে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

দুই-তিন দিনের মধ্যে আরও পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফসহ অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  

এসব গ্রামের ১০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত এবং পাঁচ হাজার এখনও মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের নজরুল ইসলাম ইসলাম (৪০) বলেন, “আমরা পানিবন্দি, ঠিক মতো ত্রাণ পায়নি, আগে ঘরে থাকা শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।”

ছোটখাতা গ্রামের গৃহিনী মোহসেনা বেগম (৩৫) বলেন, “ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রোববার রাত থেকে রান্না করা সম্ভব হয়নি। সোমবার দিনভর তিন সন্তানকে নিয়ে শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।”

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম ও ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম সোমবার সকালে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে ওই বরাদ্দ বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হবে।

কুড়িগ্রাম

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ব্রহ্মপুত্র তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক সপ্তাহের বন্যায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।

সরকারিভাবে সোমবার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা ছিল অপ্রতুল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, গত ৭দিনের বন্যায় তার ইউনিয়নের নয়াডারা, কামারটারী, হাতিয়া ভবেশ, নীলকন্ঠ, চরগুজিমারী, চর দাগারকুটি, বাবুর চর, গাবুরজান, শ্যামপুর, তাতিপাড়া গ্রামের অধিকাংশ এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে।

“সোমবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটন চাল বরাদ্দ দেয়। এই চাল ১০ কেজি করে ১০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা ছিল একেবারে অপ্রতুল।”

তিনি আরও বলেন, বন্যার্ত মানুষের হাতে কাজ নেই। ফলে হাতে টাকাও নেই। বেশি সংকট বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষেরা বিপাকে পড়েছে। 

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দেড়শ মেট্রিকটন চাল ও তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা সরবরাহ করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, পথঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে আছে ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাঠদান বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠানে।

গাইবান্ধা

গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সোমবার আরো অবনতি হওয়ায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বন্যায় জেলার ৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হেমায়েত আলী শাহ বলেন, ব্রহ্মপুত্রের নদ কাছাকাছি ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ আছে।

এছাড়া উপজেলার ঝানঝাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গলনা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কটকগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্বশেষ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর ও ঘাঘটের পানি বিপদসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনের ভাঙনে তার ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, পশ্চিম জিগাবাড়ি, হরিচন্ডি, পাগলারচর এলাকায় নদী ১৩০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।

হুমকির মুখে পড়েছে জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিগাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ও জিগাবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিক।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এখনও সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় নাই বলে দাবি করেছেন তিনি।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, প্রশাসনের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। কোথাও কোন সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে ১২৫ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।