জোর করে বাল্যবিয়ে, পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পরিবারের অসম্মতিতে জোর করে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতবরদের বিরুদ্ধে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2017, 05:13 PM
Updated : 5 July 2017, 05:13 PM

গত ২৮ জুন উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বাগদোবাড়িয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি বুধবার জানাজানি হয়।

এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে।  

বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে মেয়ের বাবাকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে গ্রামের মাতবর ও পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে। 

এলাকাবাসী জানায়, বাগদোবাড়িয়া গ্রামের পঞ্চম শ্রেণিরিএক ছাত্রীর (১২) সঙ্গে উপজেলা ধামগড় ইউপির শ্রীরামপুর গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের (১৬) ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে। ঈদের দিন সোমবার বিকালে তারা দুজন একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন তাদেরকে আটক করে ছেলের বাড়িতে নিয়ে যায়।

এদিকে, মেয়ের বাবা খবর পেয়ে বন্দর থানা থেকে এসআই মোহাম্মদ আলীমসহ পুলিশ নিয়ে ছেলের বাড়ি যান। পরে গ্রাম্য মাতবররা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার আশ্বাস দিলে পুলিশ ফেরত চলে আসে।

মেয়ের বাবা বলেন, দুদিন পর ছেলের বাড়ি শ্রীরামপুর গ্রামে এ বিষয়টি গ্রাম্য সালিশ বসে। সালিশে মাতবররা ছেলে ও মেয়েকে বিয়ের সিদ্ধান্ত দেন। এ সময় মেয়ের বাবা তা না মেনে সালিশ থেকে চলে যান এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলীম ঘটনাস্থলে গেলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, এরপর ওই রাতেই গ্রাম্য মাতবর ইব্রাহিম, কাবিল হোসেন কাবিলা, আওয়াল ভূঁইয়া, হানিফা ও নূর মোহাম্মদ বিয়ের জন্য স্থানীয় কাজী ফয়েজকে নিয়ে আসেন। কিন্তু মেয়ের বয়স ১২ বছর ও ছেলের বয়স ১৬ বছর হওয়ায় কাজী বাল্য বিবাহে অনীহা প্রকাশ করে চলে যান।

পরে মাতবরা ৩শ’ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিবাহ সম্পন্ন করে ছেলের বাড়িতে মেয়েকে রেখে দেন বলে মেয়ের বাবার অভিযোগ।

মেয়েটির বাবা বলেন, তার স্ত্রী নেই। মেয়ের নামে ৬ শতাংশ জমিসহ একটি বাড়ি রয়েছে। সম্পত্তির লোভে তার মেয়েকে তুলে নিয়ে ওই ছেলের বাড়িতে নিয়ে গ্রাম্য মাতবররা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন।

থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো পুলিশ ও গ্রাম্য মাতবরা তাকে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গ্রাম্য মাতবর কাবিল হোসেন কাবিলা বলেন, “আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় মাতবররা আমাকে সালিশ বৈঠকে নিয়ে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিবাহের কথা উঠে আসে। তারপর তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।”

মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইমন বলেন, “মেয়ের বাড়ি আমার গ্রামেই। এ বিবাহে আমি রাজি ছিলাম না। পরে আমাকে না জানিয়ে তার বাবার অসম্মিতে জোরপূর্বক বাল্য বিবাহ দিয়েছেন স্থানীয় মাতবররা।”

থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর এসআই মোহাম্মদ আলীম ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও তিনি জানান। 

বন্দর থানার এসআই মোহাম্মদ আলীম বলেন, “ঘটনাস্থলে আমি গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাই। তবে গ্রাম্য মাতবররা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার আশ্বাস দেওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে গ্রাম্য মাতবররা কীভাবে বিয়ে দিল এবং কেন তাকে উদ্ধার করা হলো প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তবে মেয়ের বাবাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই আলীম।  

বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিব বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু মেয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাই বন্দর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”