শিশুদের অভিযোগ, তাদের দিয়ে গৃহস্থালি নানা কাজ করানো হয়। ঠিকমতো কাপড়চোপড় দেওয়া হয় না। প্রতিদিনের প্রসাধনী, পোশাক-পরিচ্ছদসহ নানা ব্যবহারিক সামগ্রী ঠিকমতো দেওয়া হয় না।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে শিশুদের ভাষ্য।
ঈদের দিন দুপুরে পটুয়াখালী সরকারি শিশু পরিবারের মূল গেইট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল কয়েকজন পূর্ব পাশের ভবনের ফটকের সিঁড়িতে বসে গল্প করছিলেন। আর একটু এগিয়ে দেখা হয় শিশু পরিবারের কম্পাউন্ডার শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে।
তত্ত্বাবধায়ক সালাম সাহেব ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ায় তিনি দায়িত্বে রয়েছেন।
অনুমতি নিয়ে শিশুদের হোস্টেলে ঢুকতেই দেখা যায় শিশুদের মাঝে ঈদের আনন্দ আর উল্লাস। কিন্তু বেশ কয়েকজন শিশুকে রান্না-বান্না, বাসন -কোসন পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। কেউ আবার সালাদের জন্য শসা কাটছে।
তারা কাজ করছে কেন জানতে চাইলে শিশুরা বলে, বাবুর্চি একজন, তাই তাকে সহযোগিতা করছে তারা।
পরে তারা সাংবাদিকদের কাছে বলে নানা অনিয়মের কথা।
তারা বলে, তাদের নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, প্রতিদিনের ব্যবহারিক প্রসাধনী, পোশাক পরিচ্ছদসহ বহুকিছুই ঠিকভাবে দেওয়া হয় না।
নবম শ্রেণির তিন শিশু বলে, ঈদের দিন সকালে প্রত্যেক শিশুর জন্য আলাদা প্রসাধনী দেওয়ার কথা থাকলেও ছয় থেকে আট জনের জন্য একটি মাত্র দেওয়া হয়েছে।
গত এক বছরে তাদের জুতা -স্যান্ডেল দেওয়া হয়নি বলেও জানায় নবম শ্রেণির একাধিক শিশু।
ঈদের দিন সকালের নাস্তায় তাদের নুডুলস আর ফিরনি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় তারা।
তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা কম্পাউন্ডার শাহজাহান মিয়া বলেন, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় নিয়ন্ত্রিত এতিম শিশুর পরিবার এটি। এর মধ্যে ঈদের দিন উপস্থিত ছিল ১৩৩ জন।
তিনি জানান, ঈদের দিন দুপুরে শিশুদের দেওয়া হয়েছে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর গোস্ত, ডাল ,লেবু, শসা, জুস। বিকালে চটপটি, রাতে সাদা ভাত আর মুগডাল দেওয়া হয়েছে।
কম্পাউন্ডার শাহজাহান মিয়া, বড় আপা নাজনীন আক্তার, পারুল খাতুন ও আক্তারুন্নেছার দাবি, সবকিছুই নিয়মের মধ্যে শিশুদের সরবরাহ করা হয়েছে।
এতেই শিশুরা খুশি বলেও জানান তারা। এখানে শিশুদের মায়ের আদরেই খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের লালন পালন করা হয় বলে জানালেন দায়িত্বে থাকা বড় আপারা।
তবে একজন বাবুর্চি থাকায় মাঝে মধ্যে শিশুদের দিয়ে একটু কাজ করানো হয় বলে স্বীকার করেন তারা।
এ নিয়ে কথা বলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মাছুমুর রহমান জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্তৃপক্ষ দাবি করছে শিশুদের যা সরবরাহ করা হয়েছে সবকিছুই নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে।”
ঈদের বিশেষ দিনে এতিম শিশুদের জন্য সরকারিভাবে যা বরাদ্দ করা হয়েছে তা বিতরণে কমতি হলে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।