ঈদযাত্রা: দক্ষিণের পথে জট, উত্তরে ধীরগতি

ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া যানবাহনের চাপে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। সড়কে নির্মাণকাজের কারণে উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কিছু অংশেও যানবাহন চলছে ধীর গতিতে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2017, 11:55 AM
Updated : 22 June 2017, 04:42 PM

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে বাউশিয়া পর্যন্ত সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যানজট রয়েছে। তবে মাওয়ার পথে যানবাহনের সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম। 

ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. হাসেম উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী যানের সংখ্যাই বেশি।

ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার গাড়িকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতি সেতু পার হতে হয়। চার লেইনের সড়কের পর দুই লেইনের সরু সেতুতে টোল আদায়ে বেশি সময় লাগায় সৃষ্টি হয় যানজট। এর মধ্যে কোনো গাড়ি বিকল হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার ধারণ করে।

ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর আগে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায়  অফিস করে অনেকেই পরিবার নিয়ে বাড়ির পথ ধরবেন। ফলে রাতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে বলে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইলের ভোগান্তি চার লেইনে

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোথাও কোথাও গাড়ির লম্বা লাইন দেখা দিলেও অসহনীয় যানজট তৈরি হয়নি।

যানজট নিরসনে সড়কে এক হাজারের মতো পুলিশ সদস্য কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বুধবার এ সড়কে ১৯ হাজার যান চলাচল করেছে।”

বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদুর রহমান মনির।

তিনি বলেন, “অতিরিক্ত এই গাড়ির চাপ আর চার লেইনের কাজে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় মাঝে মাঝে কিছুটা জট দেখা দিচ্ছে। তবে টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ বিভাগকে খানাখন্দ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যেতে দেখা গেছে।”

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নূর-এ-আলাম জানান, এ মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথে চার লেইনের কাজ চলছে।

কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ওভারপাস

কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় রেললাইনের ওপর ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলায় সেখানে প্রায়ই এক-দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেছে, চট্টগ্রামমুখী লেইন খানাখন্দে ভরা। শুধু ঢাকামুখী লেইন দিয়ে উভয় দিকের যান চলাচল করায় গাড়ির জটলা তৈরি হচ্ছে।

 

দাউদকান্দি টোল প্লাজাতেও সকালে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ জট দেখা যায়।

টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক জিয়া আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়ির তুলনায় টোল আদায়ের ক্ষমতা কম। এ কারণে মাঝে মাঝে ১০-১৫ মিনিট করে জট থাকে, আবার কমে যায়।”

সাভারে গাড়ি চলছে থেমে থেমে

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যান চলছে থেমে থেমে। সড়কের রেডিও কলোনি থেকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কে সকাল থেকে মাঝে মধ্যেই জট তৈরি হচ্ছে।

সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবুল হোসেন বলছেন, অন্যবারের তুলনায় যানজট এখনও কম। কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সেখানে মাঝেমধ্যে থেমে থেমে গাড়ি চলছে। সাভার বাজার এলাকায় যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার কারণেও জট তৈরি হচ্ছে।

পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুরে ভারী গাড়ির চাপ বেশি

নাওজোর মহাসড়ক পুলিশের এসআই বিনয় কুমার সরকার জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে টঙ্গীর তারগাছ পর্যন্ত এবং বাইপাস মোড় থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত গাড়ির চাপ রয়েছে।

“গাড়ি ধীরগতিতে চললেও বড় যানজট নেই। তবে সড়কে ট্রাক-লরি ও পণ্যবাহী গাড়ি বেশি দেখা গেছে।”

ঈদের তিন দিন আগে ও তিন দিন পরে মহাসড়কে ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করায় এখন এ ধরনের গাড়ির চাপ বেশি বলে তিনি মনে করছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন সরকার জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই জায়গায় গাড়ি বিকল হওয়ায় যান চলাচল সাময়িক বাধাগ্রস্ত হয়।

“পুলিশ বিকল গাড়ি দুটি সারানোর পরও মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল। এ কারণে চন্দ্রা, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি এলাকায় মাঝে মাঝে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে দুপুরে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়।”

সন্ধ্যার পর ঘরমুখো মানুষের গাড়ির চাপ আবার বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। তবে এ পথে যাতে যানজট না হয় এমন প্রস্তুতি আছে পুলিশের। 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শঙ্কা ‘অবৈধ পার্কিং’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে সবসময়ই গাড়ি রাখায় ঈদের সময় যানজটের শঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা।

মহাসড়কের চরপাড়া মোড়, চুরখাই, বইলর, ত্রিশাল, ভরাডোবা, ভালুকা, সিডস্টোর, জৈনা বাজার হয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বহু এলাকায় গিয়ে রাস্তার দুইপাশে অসংখ্য গাড়ি রাখা হয়।

এ রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের বাসচালক রাজু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সড়কের পাশে গাড়ি পার্ক করায় সারা বছরই যানজট থাকে। দুই ঘণ্টার জায়গায় চার ঘণ্টা সময় লাগে গন্তব্যে পৌঁছাতে। এ কারণে ঈদের সময় তীব্র যানজট হতে পারে।

ময়মনসিংহের মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শ্রমিকনেতা ও স্ট্যান্ড সুপারভাইজার মিলন মিয়া বলেন, “গত বছর ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে বাস আসতে সময় লেগেছে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা। এবারও প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে একই রকম যানজটের আশংকা রয়েছে।”

ময়মনসিংহ শহরের জলি আক্তার বলেন, “ঈদের আগেই সড়ক থেকে এসব জঞ্জাল অপসারণ করা দরকার। না হলে দুর্ভোগ এড়ানো যাবে না।”

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলছেন, ঈদের কথা চিন্তা করে যানজট নিরসনে মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশে থাকা অবৈধ স্ট্যান্ড ও বাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে।

“তারপরও যারা সড়ক দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।