মিন্টুর জামিনে নিরাপত্তা শঙ্কায় শিমুলের স্ত্রী

হত্যা মামলায় মেয়র মিরুর ভাই হাবিবুল হক মিন্টু জামিন পাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2017, 11:27 AM
Updated : 6 June 2017, 12:23 PM

মঙ্গলবার বগুড়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যেহেতু আমি চাকরির কারণে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বগুড়া শহরে অবস্থান করছি, তাই মিন্টু জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে নিজের চেয়েও বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।”

গত ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শটগানের গুলিতে নিহত হন দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল।

আব্দুল হাকিম শিমুল

এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার মেয়রসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে বগুড়ায় অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে চাকরি পান নুরুন্নাহার।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে রোববার জামিন পেয়েছেন মিন্টু।

ঘটনার পর নুরুন্নাহারের করা হত্যা মামলা ছাড়াও ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের চাচা এরশাদ আলী মেয়রের ভাই মিন্টু ও পিন্টুসহ ২০/২৫ জনের নামে আরেকটি মামলা করেন। তাছাড়া মিন্টুর অবৈধ পাইপগান উদ্ধার হলে পুলিশ বাদী হয়ে তাকে একমাত্র আসামি করে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে।

মিন্টু

লিখিত বক্তব্যে মিন্টুকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী উল্লেখ করে নুরুন্নাহার বলেন, “তার জামিন পাওয়ার ঘটনা আমাকে আতঙ্কিত করে তুলেছে; কারণ মিরু পরিবার সিরাজগঞ্জ থেকে পাবনা হয়ে বগুড়া পর্যন্ত নানাভাবে সংযুক্ত।”

মিন্টুর জামিনের পর অসহায় বোধ করছেন উল্লেখ করে শিমুলের স্ত্রী এ হত্যা মামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে মিন্টুর জামিন বাতিল এবং মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরের দাবি জানান।

শিমুল অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর লেখায় শাহজাদপুরের মেয়র হালিমুল হক মিরু তাকে তাদের শত্রু মনে করতেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান নুরুন্নাহার।

তিনি বলেন, জামিন পেয়েই তিনি জেল গেইটে তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘চিন্তা করিস না। জামিনে ছাড়া পাইছি। ভয় নাই সবাই জামিন পাবে’।

“জামিন পাওয়াটা আসামির আইনগত অধিকার। কিন্তু যে আসামি জামিনে বেরিয়েই জেলগেইটে এইসব কথা বলতে পারেন তার জামিন বহাল থাকতে পারে কী করে?”

শিমুল হত্যা মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আসামিপক্ষ শুরু থেকেই এই হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে নানামুখী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক মাসেরও বেশি আগে মামলার অভিযোগপত্র হলেও আদালতে এখন পর্যন্ত তা গৃহীত হয়নি।

“অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরু আর শাজহাদপুর পৌরসভার মেয়র থাকতে পারবেন না। তাই অসুস্থতার অজুহাতে তাকে ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়াচ্ছেন।”

তাছাড়া এই মামলার অনেক আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। পলাতক এ আসামিদের নিয়েই কিছুদিন আগে মিরুর মুক্তির দাবিতে তার এলাকায় মানববন্ধন করেছে বলে জানান শিমুলের স্ত্রী।

তিনি বলেন, মিন্টু একজন মেয়রের ভাই। তাছাড়া তিনি নিজেও সরকারের শরিক দল জাসদের পাবনা জেলার নেতা ছিলেন। তার মতো একজন প্রভাবশালী আসামিকে জামিন দেওয়া হলে মামলার স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

“শিমুল হত্যার ন্যায় বিচার পেতে হলে বিচার চলাকালীন এই হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাউকে বাইরের আলো-হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে দেওয়া যাবে না। বরং এখনও যারা গ্রেপ্তার হননি তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে নুরুন্নাহার খাতুন তার স্বামী শিমুল হত্যকাণ্ডের পর তাকে বগুড়ায় সরকারি অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।