লংগদু থানার ওসি মোমিনুল হক জানান, শুক্রবার সকালে লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা পাড়া ও মানিকজুড় ছড়াসহ চারটি গ্রামে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লংগদু উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে জানিয়েছেন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তাজউল ইসলাম।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা দাবি করেছেন, ওই মিছিল থেকে পাহাড়িদের আড়াইশর বেশি বসতঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগুন দেওয়ার ঘটনার সময় তিনটিলা এলাকার এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং এক দম্পতি নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জনসংহতি সমিতির লংগদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা।
বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার পর স্থানীয় পাহাড়িরা আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলেও তার ভাষ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মো. তারিকুল হাসান বলেন, “আগুনে পুড়ে হতাহতের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আগুন দেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার যুবলীগের লংগদু সদর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধারের পর এই উত্তেজনার সূচনা। নয়ন ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালানোর কাজ করতেন।
শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের পর নয়নের লাশ লংগদু উপজেলা সদরের বাট্ট্যা পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তার লাশ নিয়ে লংগদু সদরে বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে কিছু লোক তিনটিলা পাড়া, বাত্যাপাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ মানিকজুড় ও বড়াদম এলাকায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
লংগদু থানার ওসি মোমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিছিল করার সময় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে ইট-পাটকেল মারে। এক পর্যায়ে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।”
ওই খবরের সঙ্গে কয়েকটি ছবি অল্প সময়ের মধ্যে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বাড়িঘর জ্বলতে এবং লোকজনকে জিনিসপত্র ও ব্যাগ হাতে সরে যেতে দেখা যায়।
সেগুলো লংগদুর ঘটনার ছবি বলে ফেইসবুকে দাবি করা হলেও পরে দেখা যায়, তার মধ্যে টঙ্গীর একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ছবিও রয়েছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শুক্রবার দুপুরে লংগদু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা হয়। লংগদু জোনের জোন কমান্ডার আব্দুল আলিম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউল সরোয়ার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয় বলে লংগদু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. তৈয়ব জানান।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারারুল মান্নান বলেন, “উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্যের টহল অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”