কল চাপলে তপ্ত পানি

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের নলকূপ থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বের হচ্ছে ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিকযুক্ত অতিরিক্ত গরম পানি।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 06:09 AM
Updated : 15 May 2017, 06:10 AM

উপজেলার ধলা ইউনিয়নের ভেইয়ারকোনা, সিকদারপাড়া, নয়াপাড়া ও আজবপুর গ্রামে গিয়ে দুই শতাধিক নলকূপের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

পানিতে গ্যাস থাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে ধারণা করছেন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পরীক্ষায় এই পানিতে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ কারণে এটা গরম এবং এতে কটুগন্ধ।

“এ পানিতে রয়েছে ১.৫ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ, যেখানে মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রা ০.১ মিলিগ্রাম। এর পিএইচ ৯.৮ মিলিগ্রাম; মানুষ সহ্য করতে পারে সর্বাধিক ৭.৫ মিলিগ্রাম।”

জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এসব নলকূপের পানিতে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করেছেন বলে তিনি জানান।

আজবপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আবু তাহের ফকির বলছেন, তারা ছেলেবেলা থেকেই এখানকার নলকূপ থেকে গরম পানি বের হতে দেখে আসছেন।

“বাপ-দাদার মুখেও এ কথা শুনেছি।”

কাওয়াখালী বাজারের স্বর্ণকার নন্দন দেবনাথ বলেন, “এ পানি সোনা বা রুপায় ব্যবহার করলে রং নষ্ট হয়ে যায়। কালচে হয়ে যায়।”

“এ পানি দিয়ে চা বানালে তাতে চায়ের স্বাদ হয় না, রং হয়ে যায় কালা,” বললেন বাজারের চা বিক্রেতা আব্দুল হাই।

এসব নলকূপ থেকে শুরুতে কয়েক লিটার স্বাভাবিক পানি বের হয়। তারপর বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা।

সিকদারপাড়া গ্রামের মোতাহার হোসেন বলেন, “শুরুতে সহনীয় থাকলেও ধীরে ধীরে এতটাই ফুটন্ত হয়ে পড়ে যে, গায়ে লাগলে অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়। তাই পানি ব্যবহার করতে হয় রেখে ঠাণ্ডা করে।”

“এ পানিতে গোসল করলে গা আঠা আঠা হয়ে যায়, চুলকায়,” বললেন ভেইয়ারকোনা গ্রামের গ্রামের সংগ্রাম মিয়া।

স্বাভাবিক পানির আশায় অনেকেই তার নলকূপটি এক জায়গা থেকে উঠিয়ে আরেক জায়গায় বসিয়েছেন। কিন্তু ফল মেলেনি।

ভেইয়ারকোনা গ্রামের বিল্লাল মিয়া বলেন, “এ পর্যন্ত চারবার সরিয়েও কোনো সুফল পাইনি। অন্যরাও চেষ্টা করে কোনো ফল পায়নি।

“আবার, কল বসানোর সময় প্রায়ই পাইপ দুমড়ে-মুচড়ে উঠে আসে। উড়ে যায় বহু দূর।”

গ্যাসের চাপে এমনটা হয় বলে জানান প্রকৌশলী তোজাম্মেল।

জেলার সিভিল সার্জন মো. হাবিবুর রহমান এমন অস্বাভাবিক পানি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

“নলকূপ থেকে গরম পানি বের হলে, এর স্বাদ-গন্ধ স্বাভাবিক না হলে, ব্যবহার না করাই ভালো। এমন পানিতে চর্মরোগ, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, প্যারালাইসিস, লিভারের রোগসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধি ছড়াতে পারে।”