৫ মের গণ্ডগোল হেফাজত করে নাই: শামীম ওসমান

চার বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান থেকে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল, তার সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীরা জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2017, 05:34 PM
Updated : 21 April 2017, 07:40 PM

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে হেফাজত নেতাদের উপস্থিতিতে এক সমাবেশে নিজের সঙ্গে তাদের অমিল নেই বলেও ঘোষণা করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রতিবাদে ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান’ ব্যানারে নগরীর ডিআইটি রেলওয়ে মসজিদের সামনে এই সমাবেশে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারাও ছিলেন।

২০১৩ সালের ৫ মে চালানো ওই তাণ্ডবের প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, “হেফাজত কিন্তু গণ্ডগোল করে নাই। বড় হুজুরকে (হেফাজতের আমীর আহমদ শফী) আসতে দেওয়া হয় নাই।

“ওখানে জামায়াত যাইয়া ঢুইকা গেছিল। সে কারণে মামলা খাইছে হেফাজতের লোকেরা। ঘটনা ঘটাইছে জামায়াতের লোকেরা।”

নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাতিলসহ ১৩ দফা দাবিতে ওই দিন ঢাকা অবরোধের পর বিকালে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজতকর্মীরা। ভোররাতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের তুলে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে তুলে দেয়ার আগে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত এলাকায় চলে হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডব। বহু প্রতিষ্ঠান, দোকান, গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা, কেটে ফেলে সড়ক দ্বীপের গাছ, উপড়ে ফেলে সড়ক বিভাজক।

হেফাজতের ওই তাণ্ডবে ২০টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংসদে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ওই ঘটনার চার বছর পর গত ১১ এপ্রিল গণভবনে হেফাজতের আমীর আহমদ শফীসহ কওমী মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট আলেমদের নিয়ে বৈঠক করে ‘দাওরায়ে হাদিসকে’ স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই বৈঠক থেকে হেফাজতের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র ভাস্কর্য সরানোরও আশ্বাস দেন তিনি।

কওমি শিক্ষার সনদ ও ভাস্কর্য সরানোর ঘোষণা নিয়ে সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলেম-ওলামাদের বৈঠকের পর অনেকের গা জ্বলে যাচ্ছে। কিছু বাম আর কমিউনিস্ট আছে, যারা ঢাকায় বসে সমালোচনা করে। অথচ শেখ হাসিনার আশীর্বাদ না থাকলে তারা মেম্বার পাশ করার যোগ্যতাও হারাতো।”

হেফাজতের সঙ্গে নিজের অমিল নেই বলে স্বীকার করে আওয়ামী লীগনেতা শামীম বলেন, “কিছু পত্রিকা লিখে দিলো শামীম ওসমান হেফাজত হয়ে গেছে, হেফাজতের সঙ্গে আমার মিল আছে। সেই মিলটি হলো, হেফাজত রাসুলকে নিয়ে ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করলে আন্দোলন করে, আমি শামীম ওসমানও করি।”

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার রাজিব হায়দার খুন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে ‘রাজিব মঞ্চ’ করেছিলেন দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, “এটা ছিল আমার ভুল। নাস্তিক জানলে তা করতাম না। এ জন্য ক্ষমা চাই।”

শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে গত ১৯ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সমন্বয়ক ফেরদাউসুর রহমান।

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ৭ মে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

রফিউর রাব্বি হলেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জেলা শাখার আহ্বায়ক। একই সঙ্গে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চেরও আহ্বায়ক তিনি।

সমাবেশে বক্ততার এক পর্যায়ে রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করেন শামীম ওসমান।

“আমি দাবি করছি সরকারের কাছে তার ছেলে হত্যার বিচার করা হোক। দরকার হলে যে কোন তদন্ত করা হোক, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক।”

২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে ত্বকী নিঁখোজ হয়। এর দুই দিন পর (৮ মার্চ)   শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ত্বকী হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব।

ডিআইটি রেলওয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপি সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, হেফাজত নেতা ফেরদাউসুর রহমান ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর আহমেদ বিরু প্রমুখ।