সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানা ঘিরে চার দিনের অভিযান শেষে পাওয়া চার লাশের মধ্যে বিস্ফোরণে বিক্ষত এক পুরুষ ও পোড়া এক নারীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
Published : 28 Mar 2017, 03:35 PM
বাকি দুটি লাশ এখনও শিববাড়ির আতিয়া মহলে ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতরেই রয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে ফেলার পর শনিবার সকালে সেখানে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল।
সোমবার রাতে ওই ভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়ে সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে চার জঙ্গির লাশ পেয়েছেন তারা।
এর মধ্যে বিস্ফোরণে বিক্ষত ও পোড়া দুটি লাশের সুরতহাল করা হয় আতিয়া মহলের সামনেই। পরে সেগুলো পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং মঙ্গলবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হয় ময়নাতদন্ত।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল মঙ্গলবার দুপুরে দুটি লাশের ময়নাতদন্ত করেন।
তিনি জানান, লাশগুলা কিছুদিন সংরক্ষণ করবেন তারা। এর মধ্যে স্বজনরা কেউ এলে পরীক্ষা করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে। আর তা না হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে সেগুলো দাফন করা হবে।
পরিচয় জানার চেষ্টা
আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মর্জিনা বেগম ও কাউছার আলী নামে দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মাস তিনেক আগে নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।
অভিযানের প্রথম দিন গত শুক্রবার পুলিশের আত্মসমর্পণের আহ্বানের জবাবে ওই বাসা থেকে এক নারী ও এক পুরুষকণ্ঠের কথাও শোনা যায়।
ওই দুটি লাশের মধ্যে একজন আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নেওয়া সেই মর্জিনা বলেই ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা ওই বাড়িতে ছিলেন বলে তথ্য ছিল গোয়েন্দদের কাছে। নিহত চারজনের মধ্যে একজন মুসা বলেই তারা ধারণা করছেন।
তবে বিস্ফোরণে লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেহারা দেখে তাদের শনাক্ত করা কঠিন জানিয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, “সিলেট থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিতের কাজ চলছে।”
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে ওই বাড়ি থেকে পরপর চারটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই ভবনে এখন জঙ্গিদের ফেলে রাখা বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ চলছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে অতিয়া মহলে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে।