লিটনের আসনে ভোট বুধবার, ‘শঙ্কায়’ ভোটাররা

গুলিতে নিহত গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের আসনে উপনির্বাচনে বুধবার ভোট গ্রহণ হবে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 03:49 PM
Updated : 21 March 2017, 03:49 PM

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে উপ-নির্বাচনের সব প্রস্তুতি উপজেলা নির্বাচন অফিস সম্পন্ন করেছে বলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-আল-মোতাসিম জানান।

তবে এ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।

নির্বাচনী আইন অনুসারে সোমবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের মোটরযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

তবে চর এলাকার জন্য নৌযান চলাচল করতে পারবে।

আব্দুল্লাহ-আল-মোতাসিম জানান, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১০৯টি কেন্দ্রে ৬৩৭ বুথে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

“তবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে ৫৪টি কেন্দ্র। তাছাড়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে রয়েছে ১৫টি ভোট কেন্দ্র।”

রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সরঞ্জামসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।

এ নির্বাচনে ১০৯ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৬৩৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও এক হাজার ২৭৪ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।

তবে মঙ্গলবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও ভোটারদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা।

উপজেলার ফলগাছা গ্রামের ব্যবসায়ী মানিক বাহার (৫৫) বলেন, “জাতীয় নির্বাচন মানে শঙ্কা, ভয় আর আতঙ্ক। কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন যে চিত্র দেখেছি, তা মনে হলে গা শিউরে ওঠে। ভোট দিতে যাবো কি না দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।”

একই গ্রামের চাকরিজীবী জাহিদ হোসেন (৪৫) বলেন, “আমাদের এলাকার এমপিকে দুবৃর্ত্তরা গুলি করে মেরেছে। সে ভয় তো আছেই। তার উপর এখানে জামায়াতের প্রভাব বেশি। ভোট দিতে যাব কি না, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।”

উপজেলার বেলাকা গ্রামের রিকশাচালক আউয়াল মিয়া (৩৮) নিজের ভাষায় বললেন, “ভোট মানে গণ্ডগোল। গেলোবারের এমপি নির্বাচোনোত সন্ত্রাসীরা ভোটের বাকসো পুড়ি দিচে। গুলি হচে। এব্যারক্যা কী হবি, চিনতাত আচি।”

ভোটারদের শঙ্কা প্রসঙ্গে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন এজন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পাঁচ স্তরে চার সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টিম নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান তিনি।

১৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ১৬টি ইউনিট, চার হাজার পুলিশ ও আনসার ভোটের দিন পালন দায়িত্ব করতে সুন্দরগঞ্জে অবস্থান করবে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ টহল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জে নিজ বাড়িতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য লিটন গুলিতে নিহত হলে আসনটি শূন্য হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে গোলাম মোস্তফা আহমেদ, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) শামীম হায়দার, জাসদের মোহাম্মদ আলী প্রামানিক, জাতীয় পার্টিরস (জেপি) ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা, গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম, এনপিপির জিয়া জামান খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা মোহসিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।