মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানে হামলা

ফাঁসির আসামি জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে হামলা হয়েছে প্রিজন ভ্যানে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2017, 02:07 PM
Updated : 19 March 2017, 07:42 AM

হরকাতুল জিহাদের এই নেতাকে ছিনিয়ে নিতেই সোমবার গাজীপুরের টঙ্গীতে মহাসড়কে এই হামলা হয় বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

হামলায় জড়িত অভিযোগে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে হাতবোমা ও চাপাতিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মোস্তফা কামাল (২৫) নামে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন টঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার।

তিন বছর আগে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশালে জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদের তিন নেতাকে।

সেই ধরনের উদ্দেশ্য থেকে শীর্ষ জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হাতবোমা হামলা হয় বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

তারা সবাই গাজীপুরের সুরক্ষিত কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় হাজিরার জন্য সোমবার সকালে তাদের ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়েছিল। 

বিকালে ফেরার পথে টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমির সামনে হামলার ঘটনা ঘটে বলে টঙ্গী থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান।

তিনি বলেন, “টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমির সামনে এলে প্রিজনভ্যানটি লক্ষ্য করে পর পর কয়েকটি ককটেল (হাতবোমা) নিক্ষেপ করে। এসময় দুটি বিস্ফোরিতও হয়।”

বোমায় কেউ আহত হয়নি, প্রিজন ভ্যানেও আঘাত হানেনি।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, একটি প্রিজন ভ্যানে করে হান্নানসহ ১৯ আসামিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সবাইকে ফের কারাগারে ঢোকানো হয়।

এদিকে প্রিজন ভ্যানে হামলার পরপরই হাতবোমাসহ মোস্তফা কামালকে আটক করা হয় বলে জানান ওসি।

ঘটনাস্থলে কর্মরত গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, “বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে ওই যুবককে হাতেনাতে ধরা হয়।”

ওসি ফিরোজ বলেন, ওই যুবকের ব্যাগে দুটি চাপাতি, একটি সাউন্ড গ্রেনেড ও সাতটি হাতবোমা পাওয়া যায়।

ময়মনসিংহের তারাকান্দির পাগলী এলাকার মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে কামাল নরসিংদীর শেখের চরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র বলে ওসি জানান।

তিনি বলেন, কামাল বছর খানেক ধরে গাজীপুরে ঘোরাফেরা করছিল।

ওসি ফিরোজ বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, তাকে একজন ১০ হাজার টাকা দিয়েছে এই ঘটনা ঘটানোর জন্য। তবে তার নাম বলে না।”

গ্রেপ্তার মোস্তফা কামাল

কামালের মানি ব্যাগে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তারা মনে করছিল, হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই ভুয়া আইডি কার্ড ফেলে যাবে। আমরা ওই ভুয়া আইডি কার্ডের ব্যক্তির পেছনে ছুটব।”

এই হামলার সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য ছিল দাবি করে ফিরোজ বলেন, “একটা নাশকতার চিন্তা তাদের ছিল। তাদের প্ল্যান ছিল যে নাশকতা করে মুফতি হান্নানকে হয়ত ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।”

এই সঙ্গে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলার কথা বলেন তিনি।

ওই হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান, সালাউদ্দিন সালেহীন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা।

মুফতি হান্নান সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও পুলিশসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এবং রমনা বটমূলে হামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। আরও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আটক মোস্তফাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।