কুষ্টিয়ায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার ‘একঘরে’

নামাজ পড়ার জন্য পৃথক মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুরে আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ১১টি পরিবারকে সামাজিকভাবে ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 02:30 PM
Updated : 25 Feb 2017, 06:36 PM

একটি স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের এলাকার দোকানে কেনাকাটা এবং যানবাহনে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারগুলোর সদস্যররা।

উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মহিষাখালী গ্রামের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এই ১১ পরিবারের একজন রঞ্জনা খাতুন ব্র্যাকের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এই ঘটনার চাকরি হারিয়েছেন বলে জানান তিনি।

রঞ্জনা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হুজুররা এলাকার সবাইকে বলেছে, ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষক রঞ্জনা খ্রিস্টান হয়ে গেছে। ওর কাছে বাচ্চারা পড়লে সবাই খ্রিস্টান হয়ে যাবে।

“সে কারণে এলাকার সবাই মিলে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে অন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে।”

সাগরখালী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রিনা খাতুন বলেন, স্থানীয়দের ‘নিষেধাজ্ঞার’ কারণে কোনো ভ্যান বা অটো তাকে নেয় না। ফলে কলেজেও ঠিকমতো যেতে পারছেন না তিনি।

একই ধরনের অভিযোগ রায়হান, শিপন, খোকন, পলাশ, ইদবার, আসলাম, ঝন্টু, জিল্লুর, জসিম ও সাহাবুল ইসলামের। এরা সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে সামাজিকভাবে ‘অবরুদ্ধ’ জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ।

তারা জানান, গ্রামের ছাত্তার মেম্বর, স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জিয়া ও এলাজ মণ্ডলের ছেলে আনিছসহ বেশ কয়েকজন গত ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামে ‘ধর্মসভা’ করে তাদের একঘরে করার ঘোষণা দেন।

এতে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

গ্রামের প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ার ঘটনাক্রম তুলে ধরে ফরিদ আহম্মেদ বলেন, “আগে আমরা জুমার নামাজ পড়তে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভেড়ামারা সাতবাড়িয়া উত্তর ভবানীপুর আহমদিয়া মসজিদে যেতাম। দূর হওয়ায় আমার নিজের বাড়িতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করি।

“এতে স্থানীয় মুসল্লিরা বাধা দিয়ে তাদের সঙ্গে একই মসজিদে একই ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে চাপ দেয়। তাদের এই চাপকে উপেক্ষা করে নিজের বাড়িতেই নামাজ ঘর করে নামাজ পড়ার উদ্যোগ নেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হন।

“পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে হুজুর ডেকে প্রকাশ্য সভা করে আমাদের উচ্ছেদ করাসহ নানা হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের সামাজিকভাবে একঘরে করার ঘোষণা দেন।”

ছাত্তার মেম্বর, যুবলীগ নেতা জিয়া ও আনিছসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আনিছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব অভিযোগ সব মিথ্যা। আমরা কেবল একসাথে মিলে মিশে নামাজ পড়ার কথা বলেছি মাত্র। হুজুররা কে কী বলেছে তা তারাই ভালো জানেন।”

আর যুবলীগ নেতা জিয়ার দাবি, ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে’ কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল তা তারা মিটিয়ে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিষাখালী গ্রামের এক মুদি দোকানি বলেন, “আমার কাছে সবাই খরিদ্দার, কিন্তু এলাকার মোড়ল মাতব্বরদের কথাও তো আমি ফেলতে পারি না।”

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, “ধর্মীয় বিষয়ে মহিষাখালী গ্রামের সৃষ্ট বিরোধের সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের কথা শুনে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।

“সেখানে জমিতে সেচ না দেয়া, দোকান-পাটে সদাই না দেওয়া বা যানবাহনে চড়তে বাধা দেয়ার ঘটনা আর ঘটবে না বলে সবাই আশ্বস্ত করেছে।”

‘সামান্য ছোটখাটো’ বিষয়কে সংবাদমাধ্যম অনেক বড় করে ফেলে মন্তব্য করে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।