বাবুল আক্তারকে কখনও দেখিওনি: বর্ণি

বাবুল আক্তারকে কখনও দেখেননি বলে দাবি করেছেন বনানী বসির বর্ণি, যার সঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 12:35 PM
Updated : 20 Feb 2017, 03:01 PM

শ্বশুর বাড়ির অভিযোগ নাকচ করে সোমবার মাগুরা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নারী বলেন, বাবুল আক্তারকে তিনি চেনেনও না।

বর্ণির স্বামী এসআই আকরাম হোসেন ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সড়কে নিহত হন। আকরামের পরিবারের অভিযোগ, বর্ণির সঙ্গে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কের কারণে এসপি বাবুল হত‌্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তা দুর্ঘটনা বলে সাজিয়েছিলেন।

বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু গত বছরে জুনে চট্টগ্রামে খুন হওয়ার পর নানা নাটকীয়তার মধ‌্যে বাবুলকে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয়।

এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসআই আকরামের পাঁচ বোন তাদের ভাইয়ের দুই বছর আগের মৃত‌্যুর ঘটনায় বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

তারা অভিযোগ করেন, ‘পরকীয়ার জন‌্য’ এসপি বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এসআই আকরামকে ‘হত্যা করা হয়েছিল’।

বাবুল আক্তার (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

শুরুতে জামাতার পক্ষে থাকলেও আকরামের মৃত‌্যুর আগের ঘটনাটি আলোচনায় উঠে আসার পর এখন মেয়ে হত‌্যাকাণ্ডে বাবুলকেও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।

এসব বিষয়ে বাবুলের নীরবতার মধ‌্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মাগুরায় সংবাদ সম্মেলন করে বাবুলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছিলেন বর্ণি।

তার ১৩ দিনের মধ‌্যে মাগুরায় সংবাদ সম্মেলনে এসে বর্ণি বলেন, তার ননদ জান্নাত আরা রিনি দুদিন আগে ঝিনাইদহে সংবাদ সম্মেলন করে যে অভিযোগ করেছেন, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’।

“প্রকৃতপক্ষে আকরাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২০১৫ সালে ১৩ জানুয়ারি মারা যান। সে সময়ও ননদ রিনি আমার ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরকীয়ার জেরে হত্যার অভিযোগ তুলেছিল।”

তখন বর্ণি, তার বাবা-মা, ফুপাত ভাই সাদিকুল হক মুনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।

“পুলিশি তদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টে তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে,” বলেন বর্ণি।

বাবুল আক্তারের বাড়ি মাগুরা শহরের কাউন্সিল পাড়ায়। সেখানে তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ, মা, ছোট ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও তার স্ত্রী থাকেন।

বর্ণির বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও মাগুরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। বাড়ি থেকেই তিনি মাগুরায় এসে চাকরি চালিয়ে আসছেন বলে জানান।

২০১৫ সালে মাগুরা প্রেস ক্লাবে বর্ণি যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে বাবুল আক্তারের বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদও ছিলেন।

২০১৫ সালে বর্ণির সংবাদ সম্মেলনে বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ (ছবিতে ডানে)

ওই বিষয়ে বর্ণি এর আগে বলেছিলেন, মাগুরার মহম্মদপুরে তার বাবা চাকরি করতেন। ওই সময় বাবুল আক্তারের বাবার সঙ্গে তার বাবার পরিচয় হয়।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বর্ণি বলেন, তার মেয়ের নামে ঢাকায় স্বামীর রেখে যাওয়া ফ্ল্যাট ও শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য ননদ এসব অভিযোগ তুলছেন।

বর্ণি বলেন, ননদ রিনি ও আরেক ননদের জামাই রশিদ চেয়ারম্যান তাদের ভাড়াটিয়া মাস্তান বাহিনী দিয়ে তাকে ও তার মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এ কারণে ঝিনাইদহে বাবার বাড়ি ছেড়ে তিনি মাগুরা শহরে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

বাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং মাগুরায় তার বাড়িতে থাকার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাবুল আক্তারকে আমি চিনিও না, কোনো দিন দেখিওনি। পরকীয়া ও বাড়িতে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। সব কথা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।”

তবে শুধু আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য বাবুল আক্তারের ভাই আইনজীবী লাবুর সঙ্গে পরিচয় আছে দাবি করেন বর্ণি।

এসআই আকরামের বোনদের সংবাদ সম্মেলন (ফাইল ছবি)

এসআই আকরাম নিহতের ঘটনা এবং মিতু হত্যার মধ‌্যে যোগসূত্র আছে বলে বর্ণির ননদ রিনির দাবি। বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে বর্ণি বলেন, “স্বামী সড়ক দুর্ঘনায় নিহত হয়েছে সেটি তদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। তবে সব বিষয়ে সঠিক তদন্ত হলে আপত্তি নেই।”

বর্ণির ননদ রিনি ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করেন।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই এসআই আকরাম নিহতের পর ময়না তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে মৃতদেহ দাফন করা হয়। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় একমাস পরে কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়।

“কিন্তু সে সময় ভাবি বর্ণির সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক কারণে এসপি বাবুল আক্তার প্রভাব বিস্তার করে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পুলিশি তদন্ত উল্টে দেন।”

নিজের ‘অপকর্ম ঢাকতে’ বর্ণি তাদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন, বলেন তিনি।

বর্ণি ও তার আত্মীয়-স্বজনদের ভয়ভীতি দেখানোর যে অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও দাবি করেন রিনি।