‘গাছপাগলা’ সামাদের সবুজ সাধনা

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিকশা নিয়ে রুটিরুজির খোঁজে নামেন ফরিদপুরের ষাটোর্ধ সামাদ শেখ। একশ-দেড়শ টাকা পকেটে এলেই নাশতা করে কিনতে যান গাছের চারা। গাছ না লাগিয়ে রাতে বাড়ি ফিরেছেন এমনটি ঘটেনি তার অর্ধশত বছরের জীবনে।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 06:36 AM
Updated : 20 Feb 2017, 07:59 AM

অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ তিনি ব্যয় করেন চারা কেনা, রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে।

ফরিদপুর শহরতলির ভাজনডাঙ্গা গ্রামের সামাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ১০-১২ বছর বয়স থেকে গাছ লাগাই। গাছ লাগাতে ভাল লাগে। গাছ সবার উপকারে আসে।”

স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক পুত্রবধূ নিয়ে সামাদের সংসার।

এলাকায় ‘পাগলা সামাদ’ নামে পরিচিতি পেলেও সবাই তার প্রশংসাই করেন। সংসারের দৈন্যদশা নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও ঝর্ণা বেগমও স্বামীকে নিয়ে গর্ব করেন।

ঝর্ণা বলেন, “উনি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই রিকশা চালাতে বের হন। মাথার মধ্যে সব সময় একটা বিষয়ই ঘোরে: রাস্তার পাশে, খাসজমিতে, কবরস্থানে, শ্মশানে, নদীর পাড়ে বা পুকুরের ধারে কোথায় গাছ লাগানোর একটু জায়গা পাওয়া যায়।

“ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য চারা রোপণ করেছেন আমাদের গাছপাগল।”

সদর উপজেলার শাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক আলতাফ হোসেনও জানেন সামাদকে।

তিনি বলেন, “একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ একটা ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ তাকে আমরা বলছি পাগল। আমার কাছে মনে হয় সামাদের চেয়ে সুস্থ মানুষ সমাজে কমই আছে। ব্যতিক্রম বলেই তাকে আমাদের পাগল মনে হয়।”

সামাদ ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসন উপজেলাসহ ও ফরিদপুর-সদরপুর সড়কের দুই পাশে শত শত গাছ লাগিয়েছেন বলে জানান তার প্রতিবেশী ফারুক হোসেন।

তিনি বলেন, “সামাদের মতো লোক আমাদের সমাজে খুব দরকার।”

ভাজনডাঙ্গা বাজারের মুদি দোকানি ফিরোজ শেখ বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন অনেক বড় গাছ আছে যেগুলো অনেক আগে সামাদ লাগিয়েছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই তাকে গাছ লাগাতে দেখছি।”

ফলদ গাছের চারা লাগানোই সামাদের বেশি পছন্দ।

তিনি বলেন, “ফলের গাছ লাগাতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি আমি। তাই হর্টিকালচার থেকেই বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা নিয়ে রাস্তার পাশে বা সরকারি কোনো অফিসের পাশে লাগিয়ে দিই।”

সামাদ ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দামের বিভিন্ন চারা প্রতিদিনই কিনে নেন বলে জানান ফরিদপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “অফিসের গেটে তাকে দেখলেই আমরা বুঝি সামাদের গাছ লাগবে। সামাদ কখনও বাকি রাখেন না। আমার চাকরির বয়সে এমন গাছপ্রেমী মানুষ আর দেখিনি।”

বন বিভাগের গাছের সঙ্গে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামাদের লাগানো গাছগুলো। কেউ সেই গাছ কেটে ফেললে সামাদ খুব কষ্ট পান বলে তার প্রতিবেশীরা জানান।