কুনিও হোশিকে গুলি করেন মাসুদ, আদালতে জানালেন সাক্ষী

রংপুরে কুনিও হোশির হত্যাকারী হিসেবে মামলার প্রধান আসামি জেএমবির রংপুরের আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মন্ত্রীকে শনাক্ত করেছেন ওই জাপানি নাগরিককে বহনকারী রিকশাচালক ও ঘটনাস্থলের চা দোকানি।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2017, 09:53 AM
Updated : 24 Jan 2017, 10:10 AM

মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রিকশাওয়ালা আব্দুল মোন্নাফ ও চা দোকানি আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকে শনাক্ত করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা।

সেইসঙ্গে এই দুই সাক্ষী আদালতে কুনিওকে হত্যার ঘটনাও বর্ণনা করেন বলে জানান রথীশ।

তিনি বলেন, আব্দুল মোন্নাফ তার সাক্ষ্যে বলেন প্রতিদিন কুনিও হোশিকে তার জাপানি কয়েল ঘাসের খামারে নিয়ে যেত। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কুনিওকে নিয়ে আলুটারি গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে নেমে খামারে যাওয়ার পথে মাসুদসহ তিনজন রিকশাটি আটক করে।

“এরপর মাসুদ পিস্তল বের করে কুনিওকে কাছে থেকে দুটি গুলি করলে তিনি রিকশা থেকে মাটিতে পড়ে গেলে ভয়ে পালিয়ে যান বলে মোন্নাফ সাক্ষ্যে বলেন।”

দূর থেকে আরেকজন কয়েকটি ফাঁকা গুলি করার পর তিনজন লাল রংয়ের একটি মোটরসাইকেলে করে হারাগাছের দিকে চলে যায় বলে এ রিকশাওয়ালা সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।

রথীশ বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানি আব্দুল্লাহ আল মামুনও লাল রংয়ের মোটর সাইকেলে করে তিনজন যুবক এসে মাহিগঞ্জ-হারাগাছ সড়কে অপেক্ষা করার কথা এবং মোন্নাফের রিকশায় কুনিও এলে তারা রিকশাটি আটক করে বলে জানায়।

“এরপর তিনি কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান এবং ওই তিনজনকে দ্রুত মোটর সাইকেলে উঠে হারাগাছের দিকে চলে যেতে এবং কুনিওকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।”

মোন্নাফ ও মামুন ছাড়াও যে বাড়ির সামনে কুনিওকে গুলি করা হয় সেই বাড়িওয়ালার ছেলে মাইদুল ইসলাম মুরাদ, একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও আরশাদ হোসেনও এদিন সাক্ষ্য দেন।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন। পরে বুধবার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রেখে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন বিচারক।

এ নিয়ে তিন দফায় মামলার বাদীসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। মামলায় আরও ৪৫ জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকালে কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ৬৬ বছর বয়সী জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি।

এ হত্যা মামলায় গত বছরের ১০ জুলাই জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কারাগারে থাকা আসামি জেএমবির রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা, সদস্য ইছাহাক আলী, লিটন মিয়া, আবু সাঈদ, সাখাওয়াত হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়।

পলাতক আসামিদের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল গত ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এবং নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান গত বছরের ২ অগাস্ট ভোরে রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

আরেক আসামি আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এখনও পলাতক রয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক ইব্রাহীম কবীর বলেন, আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব গত বছরের জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।