এক সপ্তাহ আগে দেওয়া ওই রায়ের অনুলিপি ও বিচারিক নথিপত্র হাই কোর্টে পাঠানোর আগে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন সাংবাদিকদের সামনে রায়ের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে উচ্চাভিলাসী কেউ র্যাবে যুক্ত হয়ে ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত হতে না পারে- সেজন্য নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক থাকার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ জানান, নারায়ণগঞ্জের রায়ের অনুলিপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র (ডেথ রেফারেন্স) বিকালে আদান-প্রদান শাখায় পৌঁছায়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন গত ১৬ জানুয়ারি এ মামলার রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন, যাদের মধ্যে ১৬ জনই র্যাব সদস্য। এছাড়া আরও নয়জন র্যাব সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর- নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আসামি নূর হোসেনের দ্বন্দ্বের জেরেই ২০১৪ সালে ওই ঘটনায় ছয়জন ‘নিরীহ’ মানুষ খুন হয়। ‘টার্গেট’ শুধু নজরুল হলেও প্রাণ গেছে আরও ছয়জনের।
খোকন বলেন, “পর্যবক্ষেণে আদালত বলেছেন, এটি একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কিছু সংখ্যক দুস্কৃতকারী ও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত ঘটনা। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গডফাদার। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জনের জন্য রায়ের পর্যবেক্ষণে র্যাবের প্রশংসা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিরস্কার করে বলা হয়েছে, কতিপয় হীনমনস্ক উচ্চাভিলাসী কর্মকর্তা তাদের স্বার্থের জন্য এই ঘটনায় জড়িত হয়েছে।
২০০৪ সালে পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা শুনতে হচ্ছে র্যাবকে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় যাদের ফাঁসির রায় এসেছে, তাদের মধ্যে র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, দুই ক্যাম্প কমান্ডার আরিফ হোসেন ও এম এম রানাও রয়েছেন। তারা অর্থের বিনিময়ে কাউন্সিলর নূর হোসেনের হয়ে ওই ঘটনায় যুক্ত হন বলে তদন্তে উঠে আসে।
আদালতের রায়ে র্যাব সদস্যদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় ওই বাহিনী ভেঙে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া নয়জনের মধ্যে সাতজনকে ১০ বছর করে সাজা এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে।
আর দুইজনকে আলামত নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, “হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিতেও নিম্ন আদালতের সাজা বহাল থাকবে বলে আমি আশা করি।”