আড়াই মাস পর কারামুক্ত রসরাজ

ফেইসবুকে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে আড়াই মাস পর বাড়ি ফিরছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2017, 09:55 AM
Updated : 17 Jan 2017, 12:39 PM

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার মো. নুরুন্নবী জানান, জামিনের কাগজপত্র জেলা কারাগারে পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে কারাগার থেকে রসরাজকে মুক্তি দেওয়া হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন সোমবার রসরাজকে জামিন দেন। পুলিশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত জামিনে থাকবেন তিনি ।

নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রাসরাজ (৩০) কারামুক্ত হয়ে স্বজনদের সঙ্গে বাড়ির পথে রওনা হন।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি পোস্ট করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

একই অভিযোগে পরদিন ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

হামলার ঘটনায় স্থানীয় বারোয়ারি মন্দিরের পুরোহিতসহ দুই ব্যক্তি দুটি মামলা করেন। প্রত্যেকটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে আসামি করা হয়। 

রসরাজকে আদালতে হাজির করে ৩ নভেম্বর পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত গত ৮ নভেম্বর রসরাজের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।  

ওই হামলার ঘটনায় নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আঁখির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে। ঘটনার দুই মাস পর ঢাকা থেকে আঁখিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে আঁখির ব্যক্তিগত সহকারী উত্তম কুমার দাস (২৫) ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মনোরঞ্জন দেবনাথকেও (৪০) আটক করে পুলিশ।

হরিপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪-১৫টি ট্রাক ভরে মানুষ আসার পর নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে হামলা হয়। যেসব ট্রাকে হামলাকারীরা এসেছিল সেগুলোর ব্যবস্থা ও অর্থের যোগান চেয়ারম্যান আঁখি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে।

এরই মধ‌্যে নাসিরনগরের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারীরা জানতে পারেন রসরাজের মোবাইল ফোন থেকে ধর্মীয় অবমাননার ছবি আপলোড হয়নি। ওই ছবি সম্পাদনা করা হয়েছিল হরিণবেড় বাজারে আল আমিন সাইবার পয়েন্ট অ্যান্ড স্টুডিও থেকে, যার মালিক জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব‌্যক্তি।

ঘটনার শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল, জাহাঙ্গীর আলম তার সাইবার ক‌্যাফে থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি প্রিন্ট করে লিফলেট আকারে তা এলাকায় বিতরণ করেন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তা স্বীকারও করেন।

জাহাঙ্গীর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আশুতোষ দাসের নাম বলেন, যিনি রসরাজের ফেইসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড জানতেন।

১০ জানুযারি আশুতোষ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং পরদিন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শফিকুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি দেন।