লিটন হত্যা: ৬ দিনেও অগ্রগতি ‘না দেখায়’ ক্ষোভ

গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতির কথা বললেও কোনো হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2017, 05:40 PM
Updated : 6 Jan 2017, 05:42 PM

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা এড়িয়ে যাচ্ছে।

ছয়দিন পরও কোনো হামলাকারী গ্রেপ্তার না হওয়ায় দলের স্থানীয় নোতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহাবাজ গ্রামে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড়িতে ঢুকে এমপি লিটনকে হত‌্যা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত।

এই ঘটনায় লিটনের বোন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। জড়িত সন্দেহে আটক ৩৯ জনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২১ জনকে বিভিন্ন মামলা ও ৫৪ ধারায় আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে।

“শুক্রবারও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। আমরা চাই দ্রুত খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হোক।

“এমপি লিটন যেহেতু জামায়াত শিবিরকে এলাকায় রুখে দিয়েছিলেন তাই জামায়াতের রাগ লিটনের উপর গিয়ে পড়ে। সে কারণে লিটনকে হত্যার বিষয়ে আমাদের সন্দেহ জামায়াত শিবির চক্রের দিকেই।”

মোস্তফা আরও বলেন, “আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার উপর ভরসা রেখে আমরা ভেবেছিলাম হত্যা ঘটনার হোতারা ধরা পড়বে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ছয়দিন পার হয়ে গেলেও সে বিষয়ে কিছুই হয়নি, কতগুলো লোক দেখানো গ্রেপ্তার হয়েছে।

“পুলিশ যেন অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে, যা আমাদের হতাশ করছে। আমরা এই তদন্ত কাজে সন্তুষ্ট হতে পারছি না। সাতদিনের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার না করতে পারলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, “অনেক তথ্যই এখন আমাদের হাতে আছে। তথ্য দিয়ে আমাদেরকে সহায়তা করুন এবং অপেক্ষা করুন। ভালো খবর শিগগিরই দেওয়া হবে।”

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে বলে আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সবদিক বিবেচনায় রেখেই তদন্ত কাজ চলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সুন্দরগঞ্জের সকল মসজিদে লিটনের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাজ গ্রামে এমপি লিটনের বিশাল বাড়িতে এখন শুধু তার চাচি শিমু, মামাতো বোন স্মৃতি এবং কেয়ারটেকাররা ছাড়া আর কেউ নেই। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড়ে একসময়ের সরগরম বাড়িতে আজ কথা বলারও যেন কেউ নেই।

কখনও কখনও নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে লিটনের কবর জিয়ারত করছেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

বাড়ির লোকজন জানান,
লিটনের মৃত্যুর পর থেকেই তার অতি প্রিয় দুটি বিদেশি অ্যালসেশিয়ান কুকুর শুয়ে আছে কবরের পাশে। কেউ ওদের কিছুই খাওয়াতে পারছে না। লিটন তাদের নাম রেখেছিলেন টাইগার ও কালু। নিজেই ওদের খাবার দিতেন এবং পরিচর্যা করতেন।

এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ

এমপি লিটনের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকালে কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ধুবনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবলু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম রেজা প্রমুখ।

বক্তারা এমপি লিটনের হত্যাকারী হিসাবে জামায়াত শিবিরকে দায়ী করে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করার মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।