বরগুনা-২ আসনের সাংসদ রিমন বুধবার রাতে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী নুরুল ইসলামকে মারধর করেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীও জানিয়েছেন।
সাংসদ রিমনও অভিযোগ অস্বীকার করেননি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহনাজ পারভীন এক বছর আগে যোগ দিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত না থেকেই পুরো বছরের বেতন বাবদ পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। তার বেতন বন্ধ করে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কিছুই করেননি।”
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই দুজন সেখানে হাজির হন। উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে এমপি ‘বৈঠক শুরু করেন’। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক কিছু মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শাহনাজ পারভীন কেন বেতন পান তা জানতে চান সাংসদ রিমন। তখন অফিস সহকারী নুরুল ইসলাম বলেন, কর্মকর্তারা বেতনের কাগজে স্বাক্ষর করেন এবং সে অনুযায়ী তার বেতন চিকিৎসকদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে চলে যায়।
এরপরই রিমন নুরুল ইসলামের মাথা টেবিলের সঙ্গে ঠেকিয়ে ডান হাত দিয়ে মারতে থাকেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান।
নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “মোবাইল ফোনে এমপি স্যার আমাদের দলীয় কার্যালয়ে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী আমি হাজির হলে শাহনাজ ম্যাডাম কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কীভাবে বেতন নিলেন তা জানতে চান। বেতন-ভাতায় আমার কোনো স্বাক্ষর প্রয়োজনই নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাই বিষয়টি দেখেন। এমন দাপ্তরিক বিধির কথা বলতে শুরু করলেই তিনি ক্ষেপে যান।
“আমিই সব করেছি, এমন অভিযোগ এনে আমাকে মারধর করেন। বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
ওই বৈঠকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামাল আহমেদ, আওয়ামী লীগের গোলাম কিবরিয়া পিয়ার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।
তারা জানান, ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর গাইনি চিকিৎসক শাহনাজ পারভীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ওই চিকিৎসক ঢাকায় রোগী দেখেন, অথচ নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।
নুরুল ইসলাম হাজিরা খাতায় শাহনাজের পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলনে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
“ওই কর্মচারীর অপরাধের কারণে সৃষ্ট জনরোষ নিয়ন্ত্রণ করতেই সংসদ সদস্যকে হাত তুলতে হয়েছিল,” বলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবির হোসেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আনোয়ার উল্লাহ বলেন, পদাধিকারবলে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এমপি মহোদয় বেশিরভাগ সময় পাথরঘাটায় থাকেন না।
“কোনো প্রয়োজন পড়লে তিনি আমাদের ডেকে পাঠান। আমরাও অফিস সময়ের বাইরে তার বাসভবনে অথবা দলীয় কার্যালয়ে দেখা করি। শাহনাজ পারভীনের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে স্যার রাগ করে নুরুল ইসলামকে মারধর করেন।”
ঘটনার জন্য নুরুল ইসলাম দায়ী নন, বিষয়টি এমপি মহোদয়কে বোঝানোর পর তিনি রাতেই হাসপাতালে আসেন জানিয়ে আনোয়ার উল্লাহ বলেন, অফিস থেকে তিনি ডা. শাহনাজের ব্যক্তিগত ফাইল নিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চিকিৎসক শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রমেশ চন্দ্র বলেন, করণিক নুরুল ইসলামকে মারধরের বিষয় তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। তবে কোনো লিখিত আবেদন পাননি।
তিনি বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে সিভিল সার্জনও অবগত। আমি ছোট কর্মকর্তা হিসেবে একজন সংসদ সদস্যের বিষয়ে কী করতে পারি?”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মো. জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তিনি জানেন না।
“তবে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীকে মারধর করা একটি ফৌজদারি অপরাধ।”
ডা. শাহনাজের কাজ না করে বেতন তোলার বিষয়টি বরিশাল বিভাগীয় পরিচালককে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ‘শিগগিরই’ তদন্ত কমিটি হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।