লিটন হত্যা: ডিএনএ টেস্টে টুপি, জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগ নেতা

সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনায় জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা উঠলেও আইনশৃংখলা বাহিনী সবদিক বিবেচনায় রেখেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2017, 05:28 PM
Updated : 5 Jan 2017, 05:31 PM

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত স্বজনসহ অন্যরা একেকজন একেকরকম তথ্য দিলেও পুলিশ শিগগিরই খুনিদের শনাক্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে চান না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি ক্যাপ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে গেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহাবাজ গ্রামে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড়িতে ঢুকে এমপি লিটনকে হত‌্যা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত।

এই ঘটনায় লিটনের বোন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। জড়িত সন্দেহে আটক ৩৯ জনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২১ জনকে বিভিন্ন মামলা ও ৫৪ ধারায় আদালতে হাজির করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খুব শিগগিরই খুনিদের শনাক্ত করতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী। সবদিক বিবেচনায় এনে তাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলা যাবে না।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শাহাবাজ এলাকার এই বাড়িতেই গুলি করা হয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে

তিনি জানান, হত্যার দিন লিটনের বাড়ির সামনে গাব গাছের দক্ষিণ দিকে একটি কালো রংয়ের ক্যাপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হামলাকারীদের মধ্যে যে দুই জন ঘরে ঢোকে তাদের গায়ে ছিল কালো রংয়ের জ্যাকেট এবং পরনে ছিল কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ।

“ধারণা করা হচ্ছে গুলি চালিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের কারো মাথা থেকে ক্যাপটি পড়ে যায়। ক্যাপটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকৃত খুনিকে শনাক্ত করতে তদন্তে সহায়ক সূত্র হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে, বলেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বাহিরগোলা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম রানাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে।

তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেও তারা এর উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বজন ও স্থানীয়দের দেওয়ার বিবরণে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এমপির শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার বলছেন, এমপি বৈঠকখানায় বসেছিলেন। এ সময় তিনি ও এমপির স্ত্রীও ওই ঘরে ছিলেন। দুই জন যুবক ঘরে ঢোকার সাথে সাথে তারা বের হয়ে যান। খুনিদের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল।

ফাহমিদা বুলবুল কাকলী: ভাই খুনের মামলার বাদী তিনি

এমপির স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি বলেন, তারা ভিতর বাড়ির উঠানে রান্নাঘরের কাছে ছিলেন। তিনি হামলাকারীদের মুখে মাফলার বা টুপি দেখেননি।

তবে দুইজনেরই দাবি, গুলির শব্দ শুনে তারা ছুটে এসেছিলেন। তাদের লক্ষ্য করে খুনিরা গুলি করেছিল হামলাকারীরা।

তাদের গৃহকর্মী ইউসুফ বলছেন, গুলির শব্দ শুনে তিনি ও বেতার ঘর থেকে বের হয়ে আসেন।

মাঠে ক্রিকেট খেলছিল কয়েজন শিশু-কিশোর।

তারা বলে, হামলাকারীদের কারোরই মুখ ঢাকা ছিল না, একজনের হাতে একটি মাংকি টুপি ছিল। খুনিরা বিকাল থেকে আশপাশের এলাকাতেই ঘোরাফেরা করছিল। এমপি মাঠে বসে তাদের ক্রিকেট খেলা দেখার সময় দুইজন খুনি তার কাছে যায় এবং জরুরি কথা আছে বলে তাকে বৈঠকখানায় ডেকে নিয়ে যায়।

লিটনের পরিবারকে নিরাপত্তা

গাইবান্ধার এসপি আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং তার একমাত্র সন্তান রাতিন লিটনের বোনদের সঙ্গে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাতিন ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ও লেভেলের শিক্ষার্থী।

তার স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে লিটনের স্ত্রী গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহতি করেন। পরে ঢাকায় তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।