‘টাকায় করে কাম, খালি মর্দের নাম’

সদ‌্য শেষ হয়ে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থের লেনদেনের খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন স্থান থেকে; অনেক পরাজিত প্রার্থী ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছেন সেসব তথ্য; এ নিয়ে ফেইসবুকে আসছে সরস আলোচনা।

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2017, 07:11 PM
Updated : 4 Jan 2017, 08:58 PM

অন‌্য সব জেলার মতো পঞ্চগড়েও জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থী ও ভোটাররা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়াও।

চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলদার রহমান প্রথমে একটু ঘুরিয়ে বলেন, ‘ভোটের আনন্দ-উৎসবে চা-মিষ্টি খাওয়ার জন্য’ টাকা দিয়েছিলেন।

একটু পরে প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, “যারা টাকা নিয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যেই ফেরত দিয়েছে। অন্যরাও ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আটোয়ারি উপজেলার দুটি কেন্দ্রে ভোট পেয়েছি মাত্র ৫টি। অথচ ৩১ জন ভোটারকে কমবেশি টাকা দিয়েছি। একইভাবে পঞ্চগড় পৌরসভা, পঞ্চগড় সদর ও হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ৩১ জনকে টাকা দিয়ে ভোট পেয়েছি মোটে ৮টি।”

তার অভিযোগ, ভোটাররা প্রায় সব প্রার্থীর কাছ থেকেই নানা অজুহাতে, মূলত ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়েছেন। এটা কোনোভাবেই উচিৎ হয়নি।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন শুধু উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। পঞ্চগড় জেলা পরিষদে ভোটার ছিল ৫৮২ জন।

পঞ্চগড়ে ভোটে অর্থ লেনদেন নিয়ে হারুন বাবু নামে এক ব্যক্তি তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “টাকায় করে কাম, খালি মর্দের নাম।”

‘চাকলা হাট এর নিউজ’ নামের একটি ফেইসবুক পাতায় চাকলাহাট ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জমিরউদ্দিন দুলার টাকা ফেরত দেওয়ার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট, হাড়িভাসা ও কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক বলেন, “আমি ৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ২৫ জনকে ২০ হাজার করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ধনাঢ্য এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কয়েক গুণ বেশি টাকা দেন। এজন্য আমি মাত্র ১টি ভোট পাই।

“বিষয়টি জানতে পেরে আমার সমর্থকরা চাকলাহাটের একজন ভোটারের কাছ থেকে টাকা ফেরত এনে আমাকে দিয়েছিলেন। ফেইসবুকে সে ঘটনার ছবি তুলে কে বা কারা প্রকাশ করে দিয়েছে।”

চাকলাহাট ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জমিরউদ্দিন দুলা ফেইসবুকে তার টাকা ফেরত দেওয়ার ছবি প্রকাশ হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ভোটের আগের দিন আমাকে জোর করে কুদ্দুস ভাই টাকা দেন। কিন্তু আমি তাকে ভোট দেইনি। এজন্য টাকা ফেরত দিয়েছি।”

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, “একজন ভোটার এক সদস্য প্রার্থীর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ভোট দেননি। ওই প্রার্থী পরাজিত হলে টাকা নেওয়া ভোটার কয়েক দিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে টাকা ফেরত দিয়ে মীমাংসা করা হয়।”

চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী আরিফুল ইসলাম পল্লব বলেন, “শুনছি পরাজিত বিভিন্ন প্রার্থী ভোটারদের দেওয়া টাকা ফেরত পেতে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।”

ভোটাররা একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ আরও আছে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুল্লাহ বাচ্চু বলেন, “টাকা দিয়ে ভোট কিনিনি। দীর্ঘদিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ভোটারদের ভালোবাসা পেয়ে জয়ী হয়েছি।”

তবে নাম না প্রকাশ করে এক সদস্য প্রার্থী বলেন, “দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া ভোটাররা সর্বোচ্চ অর্থ প্রদানকারী প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছে।

“আর প্রার্থীদের বোকা বানাতে কোনো ওয়ার্ডের সব ভোটার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে ভোট দিয়েছে, যাতে বোঝা না যায় কে কাকে ভোট দিয়েছে। ঘোষিত ফল বিশ্লেষণে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।”

নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাদের কাছে কেউ করেনি। এজন্য এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

“কেউ প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

জেলা পরিষদ ভোটে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও স্বীকার করেছিলেন।

পরোক্ষ ভোটের এই নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি।