জন্মস্থানে বিস্মৃত নূর হোসেন

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো নূর হোসেনকে প্রতিবছর দিনক্ষণ মেনে স্মরণ করা হলেও তিনি তার জন্মস্থানের মানুষের মন থেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন।

পিরোজপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2016, 10:49 AM
Updated : 10 Nov 2016, 03:27 PM

নূর হোসেনের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা গ্রামে তার স্মৃতি ধরে রাখার উদ‌্যোগ দেখা যায়নি দুই যুগের বেশি সময়ে। এজন‌্য নেই কোনো সরকারি তৎপরতাও।

একবছর আগে ‘শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ’ নামের যে সংগঠনটি তারই জমিতে গড়ে তুলেছিলেন স্বজন আর উদ‌্যোগী কিছু তরুণ, তাও আজ দখলের পাঁয়তারা করছে স্থানীয় একটি চক্র।

১৯৮৭ সালের এই দিনে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে যুবলীগকর্মী নূর হোসেন শহীদ হন।

তিন জোটের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ওই দিনে বুকে-পিঠে 'স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক' স্লোগান লিখে রাজপথে বের হয়েছিলেন নূর হোসেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি মিছিল সেদিন ঢাকার 'জিরো পয়েন্ট' অতিক্রম করার সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস আর গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় নূর হোসেন এবং যুবলীগ নেতা বাবুল গুলিতে নিহত হন।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।

সাপলেজা ইউনয়নের ঝাটিবুনিয়া পূর্ব সাপলেজা গ্রামের মো. মজিবুর রহমান ওরফে কাঞ্চন হাওলাদার ও মরিয়ম বেগমের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নূর হোসেন ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মা আর বেঁচে নেই।

শান্ত স্বভাবের নূর হোসেন গ্রামের নলী ভীমচন্দ্র বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর পরিবারের সঙ্গে চলে যান ঢাকায়।

ঢাকার নারিন্দায় বসবাস করা কাঞ্চন হাওলাদার রেস্তোরাঁয় মশলা পেষা, রিকশা ও অটোরিকশা চালিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। অর্থাভাবে অষ্টম শ্রেণির পর লেখাপড়া বাদ দিয়ে গাড়ি মেরামতের কারখানায় কাজ নেন নূর হোসেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বাবার হাত ধরে নূর হোসেন শৈশব থেকেই যেতেন আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ, মিছিলে। এভাবেই তার ভেতরে রোপিত হয়েছিল রাজনীতির বীজ, যার ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ আর প্রাণ দেওয়া।

পূর্ব সাপলেজা গ্রামের নলী ভীমচন্দ্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমীর হোসেন বলেন, “নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষা এবং নতুন প্রজন্মকে তার অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গ্রামে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক অথবা এমন কোনো নিদর্শন গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সাপলেজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়াও।

২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর নূর হোসেনের নামে গ্রামে তার নিজস্ব জমিতে ‘শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ’ গড়ে তোলা হয়।

কিন্তু স্থানীয় কয়েক ব‌্যক্তি জমিটি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন নূর হোসেনের চাচাতো ভাই রুহুল আমিন হাওলাদার।

“জমি দখল করতে সংগঠনের সাইনবোর্ডও ভেঙে ফেলা হয়েছে,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া আদালতে মামলা করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আজও, অভিযোগ রুহুল আমিনের।