হিরন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে এমন কয়েকজন চাল উত্তোলনের কার্ড পেয়েছেন যাদের বাড়িতে পাকা ঘর রয়েছে, যাদের স্বজন বিদেশে থাকে, যারা এলাকায় সম্পন্ন পরিবার হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে একই ওয়ার্ডে হতদরিদ্র কয়েকজন কার্ড পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তারা ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ারও অভিযোগ করেন।
গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাস এই সুবিধা পাবে। ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি পর্যন্ত চাল কিনতে পারবে তারা। নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারী প্রধান পরিবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে এ কর্মসূচিতে।
সরেজমিনে জানা গেছে, হিরন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তারাশী গ্রামের আমিনুর তালুকদারের স্ত্রী লুকার বেগম (৩০) হতদরিদ্র কার্ড পেয়েছেন। আমিনুর তালুকদার একজন ব্যবসায়ী। তার বাড়িতে পাকা ভবন আছে।
এছাড়া আমিনুরের বড় ভাই মিজানুর রহমান (৪৩) হতদরিদ্রদের কার্ড পেয়ে দুদফা চাল উত্তোলন করেছেন। তার বাড়িতেও পাকা ভবন রয়েছে।
একই গ্রামের একিন মোল্লার ছেলে খলিল মোল্লা হতদরিদ্রের কার্ড পেয়েছেন। খলিল মোল্লার দুই ছেলে বিদেশ থাকেন।
মাঝবাড়ি গ্রামের মহম্মদ আলীর ছেলে শহীদুল ইসলাম (৫০)। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান এবং ব্যবসায়ী হয়েও শহীদুল ইসলাম হতদরিদ্রের কার্ড পেয়েছেন। তিনি দুদফা চাল উত্তোলনও করেছেন।
অপরদিকে দেখা যায়, তারাশী গ্রামের সুখচাঁন মন্ডলের ছেলে হতদরিদ্র মানিক মন্ডল (৩৮, হতদরিদ্র সুনিল পান্ডে (৪০), মৃত নরেন দাসের ছেলে ক্যান্সার আক্রান্ত হতদরিদ্র দশরথ দাস (২৫) কার্ড পাননি।
কার্ড পাওয়া একজন হলেন আমিনুর তালুকদারের স্ত্রী লুকার বেগম। লুকার বেগম ধনী পরিবারের নারী হলেও তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কার্ড দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
লুকার বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেম্বার মহর আলী আমাদের কাছ থেকে দুইশত টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছে।”
ইউপি সদস্য মহর আলী হতদরিদ্রের তালিকায় বিত্তবানদের নাম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, “প্রথম যে তালিকাটি করেছিলাম সে তালিকা তৈরি করতে আমার অনেক ভুল হয়েছে। ওই তালিকা সংশোধন করে খাদ্য অফিসে নতুন তালিকা জমা দিয়েছি।”
তবে হতদরিদ্রের কার্ড দিতে কারও কাছ থেকে টাকা নেননি বলে দাবি করেন তিনি।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিলাল হোসেন বলেন, হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে ওই ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্মসূচির শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কোথাও চাল কম দেওয়া, কোথাও হতদরিদ্রকে না দিয়ে ধনীদের চাল দেওয়া,কোথাও এই চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনায় কয়েকটি স্থানে ডিলারশিপ বাতিল, গ্রেপ্তার ও মামলার ঘটনা ঘটেছে।