ঋণের টাকা উসুলে ভ্যান বিক্রি, চালকের আত্মহত্যা

পাওনাদাররা ভ্যান বিক্রি করে ঋণের টাকা উসুল করার পর এক ভ্যানচালক আত্মহত্যা করেছেন।

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 05:22 PM
Updated : 26 Oct 2016, 05:22 PM

মঙ্গলবার রাতে বিষপান করেন পঞ্চগড় সদরের চাকলাহাট ইউনিয়নের কেকুপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক (২৫)। বুধবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

খালেকের স্ত্রী মহিদা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় ‍দুই বছর আগে প্রতিবেশী সুরুত জামালের কাছ থেকে আব্দুল খালেক তিন হাজার টাকা ধার নেন। প্রতিদিন হাজারে ২০ টাকা সুদে এ টাকা পরিশোধের কথা ছিল।

খালেকের কাছে একই গ্রামের আরও দুই তিনজন টাকা পেতেন বলে জানান মহিদা।

তিনি বলেন, সুদের বেশকিছু টাকা খালেক পরিশোধও করেন। কিছুদিন আগে  খালেক বেসরকারি সংস্থা আশা ও আরডিআরএস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কেনেন।

“ভ্যান চালিয়ে আয়ের সিংহভাগ ঋণের কিস্তি দিতেই শেষ হয়ে যেত। অবশিষ্ট টাকায় কোনোমতে সংসার চলত। এজন্য জামালের সুদের টাকা ও অন্য পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না।”

ছবি হাতে খালেকের স্বজন

মহিদা বলেন, মঙ্গলবার রাতে আব্দুল খালেক টুনিরহাট বাজারে গেলে সুরুত জামাল ও অন্য পাওনাদাররা লোকজনের সামনে তার ভ্যানটি আটক করেন। পরে তারা ভ্যানটি ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে সব টাকা ভাগভাটোয়ারা করে নেন। শেষে ৫০ টাকার একটি নোট খালেকের হাতে দেন। খালেক সম্পূর্ণ টাকা দাবি করলে তারা বলে, ‘ওই ৫০ টাকায় বিষ কিনে খা’।

খালেকের বড় ভাই দুলাল হোসেন বলেন, খালেক বাড়ি ফিরে সব কথা স্ত্রীকে বলে বাজারে চলে যান। কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে আসেন।  

“এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন বিষের গন্ধ পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখেন খালেক মাটিতে গড়াগড়ি করছেন। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।”

স্থানীয়রা জানান, খালেক একেবারে হতদরিদ্র। তার মৃতদেহ রংপুর থেকে আনার খরচ যোগানোর সামর্থ্যও পরিবারের নেই। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে মরদেহ আনার ব্যবস্থা করেন।

এলাকায় সফিকুল ইসলাম বলেন, সুরুত জামাল উচ্চ হারে সুদ খান। তাকে দৈনিক শতকরা ১০ টাকা সুদ দিতে হয়। সকালে একশ টাকা নিলে সন্ধ্যায় ১১০ টাকা দিতে হয়।

চাকলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, “আগে থেকেই আমি খালেক ও অন্যদের মধ্যে দেনা পাওনার কথা জানি। কিন্তু এরকম দুঃখজনক ঘটনা কাম্য নয়। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম বলেন, থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সুরুত জামালকে কয়েকবার ফোন করার পর স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী ফোন ধরলেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এরপর আবার যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।