যশোর-বেনাপোল রোড: গাছ রেখেই ৪ লেন করার দাবি

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়ায় দুপাশে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো কাটা পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2016, 08:10 AM
Updated : 17 Oct 2016, 06:03 AM

তবে গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেই এই মহাসড়ক চার লেন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা, যেমনটি করা হয়েছে একই মহাসড়কের ভারতীয় অংশে।

গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার আহবান জানিয়ে জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপনও করেছেন যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। তবে দুধারের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী গাছগুলোকে রেখেই রাস্তাটি চার লেন করা হলে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।

“মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি শরণার্থীরা রাস্তার দুধারের ওই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। একাত্তর সালে শরণার্থীদের করুণ অবস্থা দেখে মার্কিন কবি অ্যালান গিনসবার্গ 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' নামে বিখ্যাত কবিতাটি লেখেন। ইতিহাসের সাক্ষী ওই গাছগুলো যেকোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”

যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, বেনাপোলের ওপারে ভারতীয় অংশের এই রোডটি চার লেনের। ওখানে শতবর্ষী গাছগুলোই সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে চার লেনের মাঝখানে। গাছগুলো রাস্তার সৌন্দার্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ওদের মতো যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের গাছগুলোও রাখার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপাড়ে গাছগুলো বেঁচে আছে

ভারতের অংশে এ মহাসড়কটির নাম ‘যশোর রোড’। পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি ওই সড়কটি চার লেন করার সময় উত্তরপাশের গাছের সারিকে মাঝখানের আইল্যান্ডে রাখা হয়েছে। ওই গাছের সারির উত্তর পাশে সড়ক বাড়ানো হয়। দক্ষিণ পাশের গাছগুলো তো এমনিতেই সড়কের পাশে পড়েছে। ফলে কোনো গাছই কাটতে হয়নি।

শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় দুইশ বছর আগে যশোর অঞ্চলে কালী প্রসন্ন রায় নামে এক জমিদার ছিলেন। তাকে সবাই কালি পোদ্দার নামে চিনতেন। তিনি ১৮৪০ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদীয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তার ব্যবস্থাপনায় হাজার হাজার শ্রমিক রাত-দিন কাজ করে ১৮৪২ সালে সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করে।

“স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকে এটি ‘যশোর রোড’ নামে পরিচিত। ভারতীয় অংশে সড়কটির নাম এখনও যশোর রোড।”

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি 'যশোর রোড' নামকরণ করলে আমাদের মর্যাদা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শহীদ লাল বলেন, সড়কটি নির্মাণে দুই লাখ ৫৮ হাজার ‘কড়ি’ ব্যয় হয়েছিল। এরপর কালী পোদ্দারের মা ছায়ায় ছায়ায় গঙ্গা স্নানে যাবেন এজন্য রাস্তার দুই ধারে তিনি বিদেশ থেকে অতি বর্ধনশীল রেইন্ট্রির চারা এনে রোপণ করেন। সেই বৃক্ষগুলোই যশোর-বেনাপোল সড়কে এখনকার মহীরূহ।

তিনি জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ৮০ কিলোমিটার ওই সড়কের মধ্যে যশোরের বকচর থেকে বেনাপোল চেকপোস্টের শূন্য রেখা পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার পড়ে বাংলাদেশ অংশে। বাকি ৪২ কিলোমিটার পড়ে ভারতে।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের উপাধ্যাক্ষ লায়লা আফরোজা বানু মলি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবহনকারী গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানান।

এদিকে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে এই গাছগুলো রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

অবশ্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল বলেন, একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে আগামী জানুয়ারি থেকে যশোর-বেনাপোল সড়কের কাজ শুরু করা হবে। তবে গাছগুলো রক্ষার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

এই প্রকল্পের পরিচালক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলী মাসুদ হায়দার জানান, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের উন্নয়ন প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে দেওয়া হয়েছে।

“প্রকল্পটিতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা। যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কের ৩৫ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে দুই লেনবিশিষ্ট। আর চার লেন রাস্তা রয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩১ কিলোমিটার। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর।”