জেলা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, স্থানীয়রা মূল ফটকের বাইরে তালা দেখে ভাঙার চেষ্টা করেও পারেননি। এ কারণে ওই পরিবারের কাউকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন তারা।
পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু ততক্ষণে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানোর পর মারা যান আরও তিনজন।
মঙ্গলবার ভোরে পীরগঞ্জ উপজেলার ভোমরাদহ ইউনিয়নের জনগাঁও গ্রামে এ ঘটনায় নিহত হন দিনাজপুরের ট্রাফিক ডিভিশনের পুলিশ কনেস্টবল খরেশ চন্দ্র, তার স্ত্রী কেয়া রানী (৩৮), ছেলে নির্ণয় (৮), মেয়ে নাইস (১৩) ও কেয়ার বোন সন্ধ্যা রানী (২২)। দুর্গাপূজার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তারা।
কিন্তু ঠাকুরগাঁও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালিকুজ্জামান বলছেন, বাড়ির যে কাঠামো তাতে ২২০ ভোল্টের ওই তার থেকে আগুন লাগার কথা নয়। বাড়ির ভেতরে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং থেকে আগুন লাগার সুযোগ রয়েছে, তবে তদন্ত না করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
অগ্নিকোণ্ডের এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসও নিজেদের মত করে তদন্ত করছে। বুধবারও বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখে আলামত সংগ্রহ করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
আগুনে ওই বাড়ির পাঁচটি কক্ষের ভেতরের অংশ ও আসবাবপত্র পুড়ে গেলেও টিনের চাল বা ইটের দেয়ালের বাইরের অংশে পোড়া চিহ্ন দেখা যায়নি খুব বেশি। ইংরেজি ‘এল’ আকৃতির বাড়ির বাইরের অংশে ছোট্ট উঠান প্রায় অক্ষত দেখা গেলেও বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ কেন বেরিয়ে আসতে পারলেন না, তা স্পষ্ট নয়।
এর পেছনে নাশকতার কোনো ঘটনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ বলেন, “পুলিশ বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করছে। তদন্তে সব খোলাসা হবে।”
সুরেশ চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পূজা উপলক্ষে গত সোমবার দিনাজপুর থেকে ট্রেনে করে বাড়িতে আসে খরেশের স্ত্রী-সন্তানরা। তাদের সঙ্গে আসেন কেয়ার বোন দিনাজপুর সরকারি কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্রী সন্ধ্যা। খরেশ মোটরসাইকেলে করে বিকালে বাড়ি আসেন।
“দশমীর দিন কে কী করবে তা নিয়ে রাতে আলোচনা করে ঘুমিয়ে পড়েছিল সবাই। ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে খরেশের বাড়িতে আগুন জ্বলছে।”
খরেশের মা চৈতী রাণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার তিন ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে খরেশ ছিলেন দ্বিতীয়।
“চাকরির জন্য দিনাজপুরেই থাকত। সবার সঙ্গে পূজা করতে বাড়ি এসেছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”
খরেশের বন্ধু পনেশ কুমার রায় জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনিও ছুটে এসেছিলেন। ভেতর থেকে চিৎকারও শুনতে পেয়েছেন। কিন্তু কাউকে বাঁচাতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন জানান, তাদের সহযোগিতা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা খরেশের ঘরের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এরপর দগ্ধ অবস্থায় খরেশ, তার মেয়ে নাইস ও ছেলে নির্ণয়কে উদ্ধার করা হয়। তার আগেই দগ্ধ হয়ে মারা যান কেয়া ও সন্ধ্যা।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি খুব স্পর্শকাতর। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”