জিহাদের কথা বলে নিয়েছিল ভুল পথে: আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বগুড়ায় আত্মসমর্পণ করে প্রতিশ্রুত অর্থ নিয়েছেন গুলশান হামলাকারীর এক বন্ধুসহ দুই জঙ্গি। দুজনই বলেছেন, জিহাদের কথা বলে অন্ধকারের পথে নেওয়া হয়েছিল তাদের, সে ভুল বুঝতে পারছেন তারা।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2016, 08:43 AM
Updated : 5 Oct 2016, 11:52 AM

বুধবার বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ‘নব‌্য জেএমবি’র এই দুই সদস্যের হাতে র‌্যাবের প্রতিশ্রুত ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

এদের একজন হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী খায়রুল ইসলাম পায়েলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবদুল হাকিম (২২)। তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।

অন‌্যজন হলেন- গাইবান্ধার সাঘাটা থানার হাটভরতখালী গ্রামের প্রয়াত সেকান্দার আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান বিজয় (২৩)।

জঙ্গিবাদ ছেড়ে আসায় তাদের স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করার পথ থেকে যারা ফিরে আসবে, তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাব। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে আনবে।”

অনুষ্ঠানে হাকিম বলেন, “আমরা ভুল করে যে পথে গিয়েছিলাম, সেটা ছিল অন্ধকারের পথ। আমাকে তারা ইসলামী জিহাদের কথা বলে উৎসাহিত করেছিল।

“আমি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি। আমি জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করি না। এ পথ থেকে সবার ফিরে আসা উচিৎ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণায় সবার সাড়া দেওয়া উচিৎ।”

চেক নিচ্ছেন আবদুল হাকিম

চেক নিচ্ছেন মাহমুদুল হাসান বিজয়

মাহমুদুল বলেন, “আমি যেখানে গিয়েছিলাম, তারা শিয়া, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের হত্যার কথা বলে। আমি ফিরে এসেছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি যেন দেশের জন্য কাজ করতে পারি সে জন্য দোয়া করবেন।”

হাকিম আলিম পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী। মাহমুদুল বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ছেন।

হাকিমের বড় ভাই আব্দুল হালিম এবং মাহমুদুলের মা আকতার জাহানও অনুষ্ঠানে কথা বলেন। তারা নিজেদের সন্তান ও ভাইয়ের কৃতকর্মের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান এবং জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

যেসব পরিবারের সন্তানরা বিপথগামী হয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনার উদ‌্যোগ নিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান আসাদুজ্জামান কামাল।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ‌্য উঠে আসার পর র‌্যাব-পুলিশ নিখোঁজ তরুণদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসার আহ্বান জানায়; র‌্যাবের পক্ষ থেকে ঘোষণা হয় পুরস্কার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যারা পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হয়েছে, তারা ফিরে আসার জন্য যোগাযোগ করছে। শিগগিরই আরও জঙ্গি সদস্যরা আত্মসমর্পণ করবে।”

তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তিই জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ‌্যা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ তরুণদের পথভ্রষ্ট করছে। বিদেশিদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

“কারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেনেছে। জামায়াত-শিবির তরুণদের পথভ্রষ্ট করতে উৎসাহিত করেছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।”

অনুষ্ঠানে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, “শান্তির ধর্ম ইসলাম বিনা কারণে রক্তপাত সমর্থন করে না। শান্তির ব্যানার ব্যবহার করে যারা দেশে অশান্তি করছে, সেই শকুনিদের ডানা ও কলিজা ছিড়ে ফেলা হবে।”

গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান জঙ্গিদের মনে করিয়ে দিতে কল‌্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, আজিমপুর, রূপনগরে অভিযানের কথা তুলে ধরেন তিনি।

“যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদেরকে পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে, যাতে সমাজের মূল ধারায় তারা ফিরে আসতে পারে,” বলেন তিনি।

র‌্যাব-১২ অধিনায়ক মো. শাহাবুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন।