মধুমতি থেকে বালু উত্তোলনে অনিয়মের অভিযোগ

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী-ভাটিয়াপাড়া-টুঙ্গিপাড়া রেললাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে মধুমতি নদী থেকে বালু উত্তোলনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 06:34 AM
Updated : 25 Sept 2016, 06:34 AM

এতে নদীতীর রক্ষা বাঁধ, আবাদী জমি ও বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পড়াসহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ওই কোম্পানি উপজেলার করফা, চরফুকরা, জয়বাংলা খেয়াঘাট ও চর কালনা ফেরিঘাট এলাকায় নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে।

এ নিয়ে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মালিকদের সঙ্গে এরাকাবাসীর মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।  

গত ১৮ অগাস্ট গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইনউদ্দীন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, রেল লাইন নির্মাণের জন্য ম্যাক্স গ্রুপ বালু ফেলার কাজ করছে। এজন্য তারা কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতি নদীর চারটি বালু মহাল ইজারা নিয়েছে। 

কিন্তু ইজারাকৃত বালু মহালের নির্ধারিত স্থানের বাইরে গিয়ে ড্রেজার দিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ বলা হয়।

প্রকৌশলী মাইনউদ্দীনের অভিযোগ আরও বলা হয়, ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়ন করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাস্তবায়িত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ এবং পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে।

“ম্যাক্স গ্রুপের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার মনোয়ার হোসেনকে মোবাইল ফোনে সঠিক স্থান থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু  ড্রেজার মালিকরা তা মানছে না।”

এ ব্যাপারে স্থানীয়রাও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

চরকালনা গ্রামের দবির উদ্দিন বলেন, কাশিয়ানী উপজেলায় সরকারিভাবে চারটি বালু মহাল ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো চর ফুকরা, ইতনার চর (জয়বাংলা খেয়াঘাট), করফা ও চর কালনা ফেরিঘাট।

“এসব এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরিপ করে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। ম্যাক্স কোম্পানি এগুলো ইজারা নেয়, কিন্তু তারা চিহ্নিত স্থানের বাইরে গিয়েও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।”

চর ফুকরা গ্রামের ওসমান আলী বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে  কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীর শংকরপাশা, ফুকরা এলাকার তীর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট, দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের কবলে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।

“চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে আমাদের অনেক পরিবারের।”

বালু উত্তোলন নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে ড্রেজার মালিকদের কয়েকদফা মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ম্যাক্স কোম্পানির বালু উত্তোলনে কাজ পেয়েছেন। তাই নিয়মনীতি ছাড়াই তারা তাদের ইচ্ছেমতো বালু উত্তোলন করছেন।

ব্যক্তি মালিকানার জায়গা থেকে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে ড্রেজার মালিকরা নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে বলে তারা অভিযোগ করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ফুকরা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সেলিম খান বলেন, “ম্যাক্সে কোম্পানির লোকেরা আমাদের জমির তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এরপর কাশিয়ানী থানা পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে টাকার বিনিময়ে আমি ছাড়া পাই।”

চর কালনা গ্রামের ফিরোজ খান (পিন্টু) বলেন, নদীর তীর ঘেঁষে তার প্রায় ছয় একর জমি রয়েছে; এভাবে বালু উত্তোলন করলে তিনি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তার জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদ কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

ম্যাক্স কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) আব্দুল ওহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি।”

কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুল হাসান বলেন, “আমরা ম্যাক্স কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) আব্দুল ওহাব সাহেবকে একাধিকবার সর্তক করেছি।”

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মোকলেছুর রহমান সরকার বলেন, “আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।”