তনু হত্যা: ৬ মাসেও অগ্রগতি নেই

কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু খুন হওয়ার ছয় মাসেও দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2016, 03:46 PM
Updated : 20 Sept 2016, 03:46 PM

মঙ্গলবার তনু খুন হওয়ার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।

এদিন কুমিল্লার পূবালী চত্বরে বাউল পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লা ও অচিন পাখি বাউল গোষ্ঠী।

তনুর হত্যাকাণ্ডের পর ছয়মাস পূর্ণ হলেও এ ঘটনায় কোনো গ্রেপ্তার নেই। তনুর পোশাক থেকে সংগ্রহ করা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তিন ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো সন্দেহভাজন কারও ডিএনএর সঙ্গে মেলানো হয়নি এখনও।

এরই মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম অসুস্থতার কথা বলে এ মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সম্প্রতি মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১১ জুলাই তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খানকে রাজশাহী বদলি করা হয়।

মামলার নতুন তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, “ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য আলোচনা চলছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ চলছে। ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।”

তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে শাহরিয়ার রহমান বলেন, “এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ডিএনএ মেলানোর কাজ চলছে। এখন গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”

চার মাস আগে (১৬ মে) মামলার তৎকালীন তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তনুর ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তনুর পরনে থাকা পোশাক পরীক্ষা করে পৃথক তিন ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডিএনএ-এর সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে দেখা হবে।

সদ্য দায়িত্ব পাওয়া তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ  বলেন, “মামলার ধারাবাহিক তদন্ত চলছে। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্টতা পেলেই ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এখনও আমরা আসামি শনাক্ত করতে পারিনি।”

মামলার বাদী তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বলেন, “আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। কোনো গড়িমসি দেখতে চাই না।”

প্রতিবাদী সমাবেশে তনুর মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি তো আমার মেয়েকে পাব না। আমি তার হত্যার সত্যিকার বিচার চাই। ছয় মাস হয়ে গেল, এখনও বিচার হচ্ছে না। বিচারটা যদি হতো কিছুটা সান্ত্বনা পেতাম। আমার সামনে পথ নাই। আমি যে এত কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করতে চেয়েছি এর কোনো মূল্য নাই।” 

তনুর ভাই আনোয়ার বলেন, “আমার বোনের হত্যার ৬ মাস হয়ে গেল, এখনও বিচার হচ্ছে না। আমরা কি তনু হত্যার বিচার পাব না? তার হত্যার বিচার নিয়ে আমাদের পরিবারে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

“আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি তনুর হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার করা হোক। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। মাঝে মাঝে আমাদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” 

প্রতিবাদী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান ও অচিন পাখি বাউল গোষ্ঠীর সংগঠক বাবুল বাউল। 

খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ৬ মাস হয়ে গেলেও তনু হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। ময়নাতদন্তের নামে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে এবং সেসব চিকিৎসকদের এখনও বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী সিআইডি কর্মকর্তাকে এখান থেকে বদলি করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন কর্মকর্তা এ বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

প্রতিবাদী সমাবেশে অচিন পাখি বাউল শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং সমাবেশ শেষে পৌর উদ্যানের জামতলা পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।

গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু খুন হন। ওইদিন রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরের একটি ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়।

প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুনিরা তনুকে ধর্ষণও করেছিল; তার ডিএনএ নমুনা তারা পেয়েছেন।

আলোচিত এই খুনের প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা।

এরপর ১৩ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী মো. ইব্রাহিম কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লার আদালতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন।

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের আড়াই মাস পর পুলিশকে প্রতিবেদন দেয় চিকিৎসক দল।

ওই প্রতিবেদনে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হওয়ার কথা বলা হয়। তবে তা ধর্ষণ কি না সে বিষয়টি এড়িয়ে যান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা, যার নেতৃত্বে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়।