রংপুরে পুলিশের মারধরে মৃত্যুর অভিযোগ

রংপুর নগরীতে পুলিশের মারধরে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2016, 08:39 AM
Updated : 20 August 2016, 08:40 AM

শুক্রবার গভীর রাতে সাতমাথা বালাটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মৃত নুরুন্নবী (৩৫) ওই এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে। অপর দুই ভাইয়ের সঙ্গে তিনি বাড়িতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন।   

নুরুন্নবীর স্ত্রী আরজিনা বেগমের অভিযোগ, কোনো মামলার আসামি না হলেও রাত ৩টার দিকে ১৫-১৬ জন পুলিশ নুরুন্নবীকে ধরতে আসে। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে ঘরের ভেতরে মারতে মারতে বাইরে বের করে মাথায় ও কানে উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকে।

“এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ তড়িঘড়ি করে তাকে পুলিশ ভ্যানে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

নুরুন্নবীর স্ত্রী আরজিনা বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন

আরজিনা জানান, তিনি দুই বছর দুবাইয়ে চাকরি করছেন। স্বামীকে নিয়ে যেতে তিন মাস আগে দেশে আসেন। স্বামীর কাগজপত্র, পাসপোর্টসহ সব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল।

নুরুন্নবীর বড়ভাই ব্যাসায়ী তোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করেন, ভাইয়ের চিৎকারের তার ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বের হয়ে দেখেন নুরুন্নবীর ঘরে পুলিশ। তিনি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে এক পুলিশ কোতোয়ালি থানার এসআই তারেক ও আরেকজন এসআই মকবুল বলে পরিচয় দেন।

“আমার ভাইকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, নুরুন্নবী মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত। তাই তাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছি। সে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় শিক্ষা দিচ্ছি।”

তিনি বলেন, অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া নুরুন্নবীকে পুলিশ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসাপাতালে যান। জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখেন পুলিশ নুরুন্নবীকে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার ভাই মারা গেছেন বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা তাকে জানিয়েছেন বলে জানান ভাই তোফাজ্জল।

কোতোয়ালি থানার ওসি এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল চুরির একটি মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নুরুন্নবীকে ধরতে গিয়েছিল পুলিশ।

“আমি ভোরে ঘটনাস্থলে গেছি। পরিবারের লোকজন চড়-থাপ্পড়ের অভিযোগ করেছে। কিন্তু আমরা প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে দেখব। তবে নুরুন্নবী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।”

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, রাতে জরুরি বিভাগের যে চিকিৎসক ছিলেন, তিনি এখন দায়িত্বে নেই। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে নুরন্নবীকে কী অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

“তার মাথা ও কানে জখমের চিহ্ন রয়েছে বলে জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা আমাকে জানিয়েছে।” 

তবে ময়নাতদন্ত  প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা বলেন, নুরুন্নবীর মাথায় ও কানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পুলিশের মারধরেই তার মৃত্যু হয়েছে।