সাখাওয়াতের মৃত্যুদণ্ডে যশোরে সন্তোষ

মানবতাবিরোধী অপরাধে সাখাওয়াত হোসেনের মৃতুদণ্ডে যশোরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শিকদার খালিদ যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2016, 03:15 PM
Updated : 10 August 2016, 03:31 PM

একাত্তরে যশোরের কেশবপুরে বিভিন্ন গ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক এই সংসদ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করে।

রায়ের খবর শোনার পর জেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্শীরা ঘরোয়া পরিবেশে মিষ্টি খেয়েছেন।

বৃষ্টির কারণে আনন্দ মিছিল করা সম্ভব হয়নি বলে জানান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়র হোসেন বিপুল।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিচার প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মানের ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফলে আদালতের দেওয়া এ রায়ের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।”

তবে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষের কথা জানান।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার রাজেক আহমেদ বলেন, “রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ছিল আমাদের অন্যতম চাওয়া। সাখাওয়াতের মৃত্যুদণ্ডাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা যারপরনাই আনন্দিত।”

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদা ছিল জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠালে তিনি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবেন। তারই ধারাবাহিকতায় কুখ্যাত রাজাকার সাখাওয়াতের সাজা হলো। এতে আমরা খুশি।”

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “এ রায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার অংশ ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বাম ও গণতান্ত্রিক দল এবং সাধারণ মানুষের আন্দোলনের ফসল। এ রায়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে।”

গণজাগরণ মঞ্চ যশোরের আহ্বায়ক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুস শহীদ লাল বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে কেশবপুর তথা যশোরবাসী কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী বলেন, “মাওলানা সাখাওয়াত একসময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। পরে তাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি আমাদের কেউ নন। আদালতের দেওয়া রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।”

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চসহ সংস্কৃতিমনা সকলের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সফলতা এ রায়। আদালত সাখাওয়াতের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে বলে আমি মনে করি।”

সাখাওয়াতের এলাকা কেশবপুরের বাসিন্দা ও যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু বলেন, “এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাখাওয়াতের বিচার। ওই এলাকার মানুষ হিসেবে এ রায়ে আমি অত্যন্ত খুশি।”

এলাকার সাধারণ মানুষ সঠিক বিচার পেয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বিদ্যানন্দকাঠি ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা গ্রামের মৃত আমির আলীর একমাত্র সন্তান সাখাওয়াত হোসেন। দরিদ্র পরিবারের এ সন্তান লেখাপড়া করেছেন মামাবাড়ি একই উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামে থেকে।

যুদ্ধাপরাধী সাখাওয়াত জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য হলেও ওই দলটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে কখনও ছিলেন না। তবে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর দলটির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং পরে জাতীয় পার্টিতে গিয়ে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হন।

সাখাওয়াতের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কেশবপুরের ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজনীতিতে আসার আগে সাখাওয়াত রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করতেন। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলাম শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা এজি অফিসে যোগ দেন।

একই সঙ্গে ঠিকাদারি ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ আয় করেন বলে জানান সিরাজুল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদ্রাসার ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি ইসলামি ছাত্র সংঘের কর্মী ছিলেন। ওই সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে যশোর-৬ ( কেশবপুর) আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে চাকরিতে ইস্তাফা দিয়েছিলেন।

১৯৯৫ সালে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে তিনি সংসদ সদস্য হন।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট হলে সাখাওয়াত মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তখন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএসএইচকে সাদেকের কাছে পরাজিত হন। ওই সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

২০০৭ সালে সাখাওয়াত জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ওই দলে তিনি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে স্থান পান।