জাপানি হত্যার আসামির সহযোগী ছিলেন জঙ্গি রায়হান

রাজধানীর কল্যাণপুরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত নয় জঙ্গির একজন রায়হান কবির ওরফে তারেক গত বছর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার প্রধান আসামি মাসুদ রানার সহযোগী ছিলেন।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদ,বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 01:47 PM
Updated : 28 July 2016, 01:47 PM

বৃহস্পতিবার রংপুরের পীরগাছা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

প্রতিবেশীরাও রায়হানকে বিভিন্ন সময় জেএমবি কমান্ডার মাসুদ রানার সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

জাপানি হত্যায় জেএমবির পীরগাছা ও কাউনিয়া অঞ্চলের কমান্ডার এই মাসুদ রানাকে গত বছর ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। 

পরে মাসুদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর কুনিও হোশি, ১০ নভেম্বর মাজারের খাদেম রহমত আলীকে হত্যা এবং ৮ নভেম্বর বাহাই সম্প্রদায়ের নেতা রুহুল আমিনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

কল্যাণপুরে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে সাতজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয় বুধবার। আর বৃহস্পতিবার রায়হানের পরিচয় শনাক্তের কথা জানায় পুলিশ।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান কবিরের ছেলে রায়হান।

বৃহস্পতিবার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, রায়হানদের বাড়ির একশ গজের মধ্যেই মাসুদ রানাসহ ওই তিন মামলার আসামি জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলী, লিটন মিয়া, আবু সাঈদের বাড়ি। তারাও কারাগারে আছেন।

রায়নদের বাড়িতে ছোট তিনটি টিনের ঘর। বাবা শাহজাহার কবিরের কিছু জমি আছে। চাষবাস করে সংসার চলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রায়হান ছোট। বড়ভাই আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে তাঁতের কাজ করেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে।

রায়হানের বাবাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মা রাহেলা বেগম দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন।

তিনি জানান, গত রোজার ঈদের পরদিন রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান রায়হান। পরে জানতে পারেন ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করছেন।

তবে রায়হানের বাবার বরাত দিয়ে ওসি আমিনুল বলেন, “তিন মাস আগে রাহেলা বেগম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময় রায়হান মাকে দেখতে এসেছিলেন।”

তবে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার পরিবার থানায় জিডি করেনি বলে জানান ওসি।

রায়হানের চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুর রউফ জানান, ২০১৩ সালে পীরগাছা উপজেলার দামুরচাকলা এলাকার দেওয়ান সালেহ আহমেদ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন রায়হান। এরপর কিছুদিন টাঙ্গাইলপাড়া জামে মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন।

ওই মসজিদটি ২০০০ সালে নির্মাণ করে দেয় কুয়েতভিত্তিক সংস্থা ইসলামিক হেরিটেজ।

গ্রামের স্কুলশিক্ষক খাজা ময়নুদ্দিন চিশতি জানান, জেএমবি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাই ২০০১ সালে মসজিদটি উদ্বোধন করে। তার নির্দেশেই বাংলাভাইয়ের শিষ্য ইটাকুমারী ইউনিয়ন জামায়াতের রুকন মাওলানা বিল্লাল হোসেনকে ওই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

“বিল্লাল হোসেনকে জেএমবিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত বছরের ১৭ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন,” বলেন শিক্ষক খাজা ময়নুদ্দিন।

রায়হানের প্রতিবেশী ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “জেএমবি কমান্ডার মাসুদ রানার সঙ্গে রায়হানের ভালো সম্পর্ক ছিল। সে মাসুদের সঙ্গে এখানে সেখানে যেত। সে জেএমবিতে যোগ দিয়েছে বলেও শোনা গিয়েছিল। সত্য-মিথ্যা আল্লাহই জানেন।”

এদিকে ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে তার লাশ চেয়েছেন রাহেলা বেগম।