পারিবারিক ‘অশান্তিতে’ হতাশ ছিলেন সাতক্ষীরার মতিউর

রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত সাতক্ষীরার মতিউর রহমান পারিবারিক ‘অশান্তির’ কারণে প্রায়ই হতাশাগ্রস্ত থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।আর এই হতাশা থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়েছিলেন বলে তাদের ধারণা।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 12:22 PM
Updated : 28 July 2016, 12:33 PM

স্বজনরা আরও জানিয়েছেন, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে মতিউরের কোনো খোঁজ ছিল না।

২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি বাড়ি থেকে উধাও হলেও পরিবার তা পুলিশকে জানায়নি বলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন।

গত সোমবার কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার ভোরে সেখানে সোয়াটের বিশেষ অভিযানে নিহত হন সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি।

মঙ্গলবার রাতে নিহত নয়জনের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেওয়ার অনুরোধ করা হল) প্রকাশ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চায় পুলিশ।

তাদের মধ্যে সাতজনের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত আঙ্গুলের ছাপের মিলিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় পরিচয় প্রকাশ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

এরা হলেন- দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪), ঢাকার ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

বুধবার রায়হান কবির ওরফে তারেক নামের আরেক জঙ্গির পরিচয় শনাক্তের কথা জানায় পুলিশ, যিনি গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের গাইবান্ধার চরে প্রশিক্ষণ দেন বলে পুলিশের দাবি।

নিহত মতিউর সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামের নাসিরউদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার কাটাখালিতে নানা বাড়ি থাকতেন।

মতিউরের বিষয়ে জানতে বুধবার রাতে তার মামা গফফার রহমানকে (৪৫) পাটকেলঘাটা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছ থেকে গুরত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সুপার জানান। 

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মতিউরের বাবা কমপক্ষে পাঁচটি বিয়ে করেছেন। মতিউর তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান।

“বাবার নির্যাতনের শিকার হয়ে তিন বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে মতিউর মামার বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই থাকতেন।”

মতিউরের মামারা আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও দাদা বাড়ির সবাই বিএনপি সমর্থক বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

পারিবারিক অশান্তির কারণে ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে মতিউর মৌলবাদী কোনো গোষ্ঠীর প্ররোচণায় জঙ্গিচক্রে যুক্ত হয়ে থাকতে পারে বলে তার দাদা আতিয়ার রহমানের ধারণা।

একই কথা জানিয়ে মতিউরের চাচী মাহফুজা বলেন, “মতিউর বরাবরই কেমন হতাশাগ্রস্ত ছিল।”  

মামা বাড়ি থাকলেও মতিউর মাঝে মাঝে দাদা বাড়ি এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতেন বলে জানা গেছে।

ওমরপুর গ্রাম পুলিশের সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, “মতিউর দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়া মতিউর মাঝে মাঝে দাদার বাড়ি এসে এলাকার লোকজনদের ধর্ম জ্ঞান দিতেন।”