ঝিনাইদহের মেসে নিবরাজের সঙ্গে আবীরও থাকতেন

ঝিনাইদহের যে মেসে গুলশান হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত নিবরাজ ইসলাম ছিলেন, শোলাকিয়ার হামলাকারী আবীর রহমানও ছিলেন সেখানে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2016, 11:22 AM
Updated : 16 July 2016, 12:41 PM

ঝিনাইদহ শহরের হামদহ সোনালীপাড়া এলাকায় ওই মেসে আট ছাত্র গত ফেব্রুয়ারিতে উঠেছিলেন বলে বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কওছর আলীর স্ত্রী জানান।

গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযানে নিবরাজসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হন।

তার ছয় দিনের মধ্যে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের কাছে পুলিশের উপর হামলার পর আবীরের লাশ পাওয়া যায়।

ঢাকার স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান নিবরাজ ও আবীর দুজনই ঢাকার বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তারা দুজনই গত কয়েক মাস ধরে পরিবারের কাছে নিখোঁজ ছিলেন।

নিবরাজের ছবি গণমাধ্যমে আসার পর ঝিনাইদহের ওই মেসের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, তারা গত কয়েকমাস ধরে নিবরাজকে দেখেছিলেন। তবে সাঈদ নামে চিনতেন তাকে।

আবীরকেও ওই মেসে এবং নিবরাজের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

“সাইদের সঙ্গে তাকেও (আবীর) চলাফেরা করতে দেখেছি। তবে তার সঙ্গে কথা হয়নি,” বলেন ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের এক ছাত্র।

কওছর আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, যে আট তরুণ তার বাড়িতে মেস ভাড়া নিয়েছিলেন, তারা সবাই ঈদের আগে চলে যায়। তারপর আরও কেউ ফিরে আসেনি।

২২ বছর বয়সী আবীরের বাসা ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে। ছেলে নিখোঁজের খবর জানিয়ে গত মার্চ মাসে ভাটারা থানায় জিডি করেন তার বাবা।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল থেকে ‘এ লেভেল’ পাশ করার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হয়েছিলেন আবীর।

শোলাকিয়ায় আবীরের লাশের কিছুটা দূরে একটি চাপাতি পড়ে ছিল। তার ঢোলা পোশাকে অস্ত্র রাখার ‘বিশেষ পকেট’ ছিল বলেও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ায় আবীরের লাশ তার পরিবার গ্রহণ করেনি। তাকে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জে দাফন করা হয়েছে।

আবীরের মতো নিবরাজও গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। গুলশান হামলাকারী আরও তিনজন তার মতোই ঘরছাড়া ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।

নিবরাজের মতো এই তরুণরা হামলার প্রশিক্ষণ কোথায় নিয়েছিলেন, কাদের সংস্পর্শে ছিলেন- তা তাদের নিখোঁজ থাকার সময়কার অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

হামলাস্থলে পড়ে আবীরের লাশ

নিবরাজ ও আবীরসহ আটজনকে  ওই মেসে স্থানীয় দারুস সালাম মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান রোকন তুলেছিলেন বলে বাড়ির মালিকের দাবি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রোকনের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া গ্রামে। তিনি ঝিনাইদহে থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বাড়িতে তার যাতায়াত কম ছিল বলে গ্রামবাসী জানায়।

বিলকিস সাংবাদিকদের বলেন, ইমাম রোকনুজ্জামান ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা থাকবে’ বলে ওই বাড়ি ভাড়া দিতে বলেছিলেন।

“প্রথমে দুইজন ওঠে। পরে আরও ছয়জন আসেন। এরপর তাদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়া হয়।”    

ইমাম রোকনুজ্জামান ও বাড়ির মালিক কওছরকে পুলিশ পরিচয়ে ঈদের আগের দিন ধরে নেওয়া হয় বলে জানান বিলকিস।

তবে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন তাদের আটকের বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

শোলাকিয়ায় হামলাকারীদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিস্তলসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন এক যুবক।

শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল নামের ১৯ বছর বয়সী ওই যুবক দিনাজপুরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র।

শফিউল আলিম পরীক্ষা শেষ না করেই সে ‘ওস্তাদের নির্দেশে’ শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে আসে বলে র‌্যাবের ভাষ্য।