‘নিখোঁজ’ শোনার পর জিডি তাজউদ্দিনের পরিবারের

গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা আসে, তার একজন লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন কাউসারের পরিবার থানায় জিডি করেছে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2016, 02:31 PM
Updated : 10 July 2016, 05:50 PM

লক্ষ্মীপুর সদর থানায় শনিবার রাতে এই সাধারণ ডায়েরি করার পর স্কুলশিক্ষক তাহেরা বেগম দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে তাজউদ্দিন যে নিখোঁজ তা তিনি এতদিন জানতেন না। গণমাধ্যমে খবর দেখে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন।

গত ১ জুলাই গুলশানে হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন বেশ আগে থেকে পরিবারের কাছে নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ্য হওয়ার পর আরও ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

তাতে লক্ষ্মীপুরের তাজউদ্দিনের (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮) নাম ছিল। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো এই যুবক ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিল বলে তার পরিবার জানায়।

তাহেরা বেগম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৩ সালে অসুস্থ বাবাকে দেখে চলে যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তাজউদ্দিনের বাবা রেলের সাবেক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ভূইয়া মারা যান। তখন চেষ্টা করেও এই মৃত্যুর খবর ছেলেকে জানাতে পারেননি তাহেরা।

তার প্রায় এক বছর পর তাজউদ্দিন অপরিচিত নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন করলে বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন বলে তার মা জানান।

তাহেরা বলেন, “দেশে টাকা পাঠানোও সে বন্ধ করে দিয়েছিল। রমজানের কয়েকদিন আগে সে বাড়িতে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলে এবং আমার শারিরীক অবস্থার খবর নেয়।”

এরপর আর কোনো যোগাযোগ না হওয়ার মধ্যে তাজউদ্দিনের নিখোঁজ থাকার তথ্য গণমাধ্যমে দেখে থানায় জিডি করেন বলে জানান তিনি।

তাহেরা বলেন, তাজউদ্দিন ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এক তরুণীকে বিয়ে করার পর সে দেশের নাগরিকত্ব পান। ওই তরুণী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করে বলে তারা জেনেছেন। ২০১০ ও ২০১২ সালে তাদের দুই ছেলে-মেয়ের জন্ম হয়।

তাজউদ্দিনের বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যায়।

“সেখান থেকেই সে নিখোঁজ হয়। এখন সে কোথায় রয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা তার খোঁজ বের করতে চেষ্টা চালাচ্ছি।”

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের আটিয়াতলী গ্রামে তাজউদ্দিনের বাড়ি। সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহেরার চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়।

১৯৮১ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া তাজউদ্দিন বাড়ির পাশে আটিয়াতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ঢাকার অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৪ সালে কম্পিউটার সায়েন্স টেকনোলজি বিভাগ থেকে বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার পার অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তিনি।

তাহেরা বলেন, নিউ সাউথওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন তার ছেলে।

তাজউদ্দিনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শাহ জাহান খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার এই ছাত্র খুব লাজুক ও মেধাবী ছিল।

গুলশানে হামলায় নিখোঁজ তরুণদেরজড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের সময় পুলিশের উপর হামলার পর নিহত এক তরুণও নিখোঁজ ছিলেন বলে খবর বেরিয়ে আসে। এসব তরুণদের পরিবার আঁচ করতে পারেনি যে তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়েছে।    

তাজউদ্দিনের ছোট বেলার বন্ধু মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে (তাজউদ্দিন) যখন দেশে আসত আমার সাথে থাকত। তার মাঝে কখনও কোনো উগ্রবাদী চিন্তা আমি দেখিনি।”

স্থানীয় দোকানি কবির আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ছোট বেলা থেকেই তাজউদ্দিনকে নিয়মিত নামাজ পড়তে দেখতেন তারা। তার ব্যবহারও ছিল মার্জিত।