গুলশান হামলা: নিহত ‘জঙ্গিদের’ আরেকজনও বগুড়ার

গুলশানের ক্যাফেতে কমান্ডো অভিযানের পর হামলাকারীর নাম দেওয়ার সঙ্গে যে পাঁচটি লাশের ছবি পুলিশ দিয়েছিল, তাদের আরেকজনও বগুড়ার বলে শনাক্ত হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2016, 02:13 PM
Updated : 31 July 2016, 07:15 PM

তাদের একজন বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৈয়াগাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল বলে ধুনট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পঞ্চানন দাস সোমবার নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের দেওয়া ছবির পাঁচজনের একজন বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার মো. খায়েরুজ্জামান বলে বগুড়া পুলিশ রোববার জানিয়েছিল।

তার বাবা-মাসহ পরিবারের তিনজনকে আটকের কথা জানিয়েছিলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।

পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক হামলাকারী যে পাঁচজনের নাম বলেছিলেন, তার মধ্যে খায়েরুজ্জামান কিংবা শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল কোনো নামই নেই।

তার বলা নামগুলো হচ্ছে- আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন।  

এর মধ্যে বাঁধন ধরেই খায়েরুজ্জামানের বাবা-মা-ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে।

বিকাশ নামে অন্যজনের বাড়িও বগুড়ায় বলে গুজব ছড়িয়েছিল। তবে রোববার বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান তা নাকচ করেছিলেন।

হলি আর্টিজান বেকারি প্রাঙ্গণে রাখা লাশ

তার একদিনের মধ্যে ধুনট থানার পরিদর্শক উজ্জ্বলের ছবি থাকা নিশ্চিত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ছয়জন সন্ত্রাসী মারা গেছে, তাদের মধ্যে ২১ নম্বর শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল বলে নিশ্চিত করা গেছে।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৈয়াগাড়ী গ্রামের বদিউজ্জামানের ছোট ছেলে উজ্জ্বল এইচএসসি পাসের পর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। তবে পড়ালেখা অসমাপ্ত রেখে ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকার একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি।

ছয় মাস আগে উজ্জ্বল সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন বলে তার স্বজনরা জানান। তখন দীর্ঘদিনের জন্য ‘তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছি’ বলে গিয়েছিলেন তিনি।

শুক্রবার হলি আর্টিজান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসানের পর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়,ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, একজন ধরা পড়েছেন।

হামলার দায় স্বীকার করে ইন্টারনেটে আইএসের নামে যে বার্তা এসেছিল, তাতে পাঁচজনের ছবি দিয়ে তাদেরই হামলাকারী হিসেবে দেখানো হয়। সেই নামগুলো হচ্ছে-আবু উমায়ের, আবু সালমা, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব।

নামের এই অমিলের বিষয়ে আইজিপি শহীদুল হক রোববার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জঙ্গিরা সব সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে।

বগুড়ায় শনাক্ত খায়েরুজ্জামান শাহজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি মাদ্রসায় পড়তেন। এক বছর ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

বাঁধনের (খায়েরুজ্জামান) নাম বলা হলেও পাঁচটি লাশের ছবির মধ্যে তিনি কোনজন, তা বলেনি পুলিশ। উজ্জ্বলের ক্ষেত্রে ধুনট পুলিশ ২১ নম্বর ছবিটি বলায় তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছে।

পুলিশের দেওয়া ৫ লাশের ছবি

আইএসের তরফে আসা হামলাকারীদের ছবি

আইএসের তরফে দেওয়া তালিকা ধরে অন্তত তিনজনের ফেইসবুকের ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করার কথা আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বগুড়ার দুজন মাদ্রাসা ছাত্র হলেও অন্য তিনজনের পড়াশোনা ঢাকার নামি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এদের একজন রোহান বিন ইমতিয়াজ গত ছয় মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবার পুলিশকে জানিয়েছিল। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহানের বাবা রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি।

আরেকজন নিব্রাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তিনি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সার্ভিসেসের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। নিব্রাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী।

আরেকজন মীর সামেহ মুবাশ্বেরও বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য। তার বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের শিক্ষক।

তবে হামলাকারী হিসেবে পুলিশের ছবিতে থাকা একজন হলি আর্টিজান বেকারির পাচক সাইফুল ইসলাম বলে তার পরিবারের দাবি।

নিহত ছয়জনের মধ্যে অন্যজনের নাম কিংবা ছবি না প্রকাশের কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি পুলিশ।