তনুর বাবা ‘নজরবন্দি’, অভিযোগ মায়ের

সোহাগী জাহান তনুর বাবাকে কুমিল্লা সেনানিবাসে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত এই কলেজছাত্রীর মা আনোয়ারা বেগম।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2016, 12:40 PM
Updated : 21 June 2016, 01:19 PM

তিন মাসেও কোনো খুনি শনাক্ত কিংবা ধরা না পড়ার মধ্যে সোমবার কুমিল্লা শহরের পুবালি চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত প্রতিবাদ-সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সমাবেশে স্বামী ইয়ার হোসেনের অনুপস্থিতির বিষয়ে আনোয়ারা সাংবাদিকদের বলেন, “ওর বাবাকে বন্দি করে রাখছে, জানেন না? ওর বাবার নিষেধ, কারও সাথে কথা বলতে পারবে না।

“কী অপরাধে অফিসের সিও সাহেব কথা বলতে নিষেধ করল এটা আমি জানতে চাই; দেশবাসীর কাছে, সরকারের কাছে, সবার কাছে। তনুর বাপে তো সরকারের বিরুদ্ধে বলে না। তনুর বাপে কি বিচার চাইতে পারে না।”

তনুর বাবাকে সম্প্রতি গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন আনোয়ারা।

তার অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কেউ সাড়া দেননি।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের একজন কর্মচারী। থাকেন সেনানিবাসের ভেতরে কর্মচারীদের কোয়ার্টারে।

গত ২০ মার্চ নিজেদের কোয়ার্টার থেকে অন্য কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে বের হওয়ার পর খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতকের ছাত্রী তনু (১৯)। সেনানিবাসের ভেতরে তার লাশ পাওয়া যায়।

তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের মধ্যে সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ তদন্তে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। সিআইডি এই মামলার তদন্ত করছে।

তনুর লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ধর্ষণের পর হত্যার সন্দেহ করলেও ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা।

তা নিয়ে সমালোচনা হলে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। তার মধ্যেই আলামত পরীক্ষা করে সিআইডি জানায়, খুন হওয়ার আগে ধর্ষিত হয়েছিলেন এই তরুণী।

তবে সম্প্রতি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও কুমিল্লার চিকিৎসকরা তনুর যৌন সংসর্গের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানালেও ধর্ষণ নিয়ে অস্পষ্টতা রাখেন। মৃত্যুর কারণও জানাতে পারেননি তারা।

সমাবেশে তনুর মা আনোয়ারা বেগম

প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে তনুর পরিবার। অস্পষ্ট ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হত্যার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিও।  

তিন মাসেও কোনো খুনি শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তনুর মা সোমবারের সমাবেশে বলেন, “আসামিদের ধরার কোনো আগ্রহ নেই। আমরারে তারা পাহারা দেয়, কোনখান দিয়ে হাঁটি, কোনখান দিয়ে যাই।”

“আমার বড় ছেলে ঢাকা থেকে আর আসেই না ভয়ে…আমার দুটা ছেলে,” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনোয়ারা।

তনু হত্যাকাণ্ডে সেনা সদস্যদের কেউ জড়িত বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি। 

সোমবারের সমাবেশেও আনোয়ারা বলেন, “আগে যদি জানতাম মাইরে ফেলাইবে আমার মেয়েরে, তাইলে তো যাইতে দিতাম না। সেনাগ লগে অনুষ্ঠান করে নাই বলে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।”

সোহাগী জাহান তনু

এর আগে গত ১০ মে ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বলেছিলেন, কুমিল্লা সেনানিবাসের সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই খুনের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আনোয়ারা বলেন, “যারা হত্যা করেছে তাদের লগে ডাক্তার জড়িত আছে। না হলে ডাক্তার রিপোর্ট মিথ্যা দেয় ক্যারে?”

সমাবেশে কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র খায়রুল আলম রায়হান সংস্কৃতিকর্মী এই কলেজছাত্রীর খুনের তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের বিএমএ সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবে বলে তিনি জানান।