সেলিম ওসমান ‘তো ওই শিক্ষককে রক্ষা করেছিলেন’

প্রধান শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠ-বস করানো নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2016, 12:49 PM
Updated : 18 May 2016, 04:06 PM

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জনরোষের মুখে থাকা পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ‘রক্ষা’ করতেই গিয়েছিলেন সেলিম ওসমান।

এই ঘটনাটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চলছে বলেও তাদের দাবি।

নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে সেলিম ওসমানের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনে ৮টি জাতীয় ও ৩৫টি জেলাভিত্তিক সংগঠনের নেতারা ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান সেলিম বন্দর এলাকায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তার ভাই এ কে এম শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

গত শুক্রবারের শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনার ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সেলিম ওসমান কান ধরে উঠ-বস করতে নির্দেশ দিচ্ছেন।

সেলিম ওসমান দাবি করেন, তার নির্বাচনী এলাকায় এক শিক্ষককে উত্তেজিত স্থানীয়রা আটকে মারধর করছে বলে খবর পাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ওই শিক্ষক নিজেই কান ধরে উঠ-বস করেন।

তার সঙ্গে একই সুরে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল হক বলেন, “স্কুল শিক্ষার্থীকে মারধর ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিক্ষুব্ধ জনতা কয়েকদফা প্রধান শিক্ষককে এলোপাতাড়ি মারধর করে শার্ট ছাড়িয়ে ফেলে।

“কোনো কিছুতেই পরিস্থিতি পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে না পেরে উপস্থিতি নেতৃবৃন্দ স্থানীয় সাংসদকে ঘটনাস্থলে আসার অনুরোধ জানান। ওই সময় পরিস্থিতি এত ভয়াবহ ছিল যে, প্রধান শিক্ষক উন্মত্ত জনতার চরম আক্রোশের মুখোমুখি এবং ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন।”

সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ‘মিনতি করে’ দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে রক্ষার আহ্বান জানান বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

সেলিম ওসমান তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উত্তেজিত মানুষদের শান্ত করেন বলে মঞ্জুরুল দাবি করেন।

তিনি বলেন, “এরপর প্রধান শিক্ষক তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে কান ধরে উঠ-বস শুরু করতে থাকে। পরে এমপি সেলিম ওসমান উপস্থিত জনতাকে বলেন, প্রধান শিক্ষককে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। আপনারা রাস্তায় কোনো সমস্যা করবেন না।”

নীল পাঞ্জাবি পরা এ কে এম সেলিম ওসমান নির্দেশ দিচ্ছেন ওই স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করতে।তবে ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, ওই শিক্ষককে রক্ষা করেছিলেন এই সংসদ সদস্য

এরপর সংসদ সদস্যই পুলিশ হেফাজতে ওই শিক্ষককে হাসপাতালে পাঠান জানিয়ে মঞ্জুরুল বলেন, “সেলিম ওসমান এমপি প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিক্ষুদ্ধ জনতার হাত থেকে শুধু রক্ষাই করেননি, বরং তাকে জনতার রোষানল থেকে বাঁচিয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

“সেলিম ওসমান ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হলে জনতার হাতে প্রধান শিক্ষকের কী ভয়াবহ পরিণতি হত, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে।”

সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় মঞ্জুরুল বলেন, “জনরোষ থেকে প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে সেলিম ওসমান অসুস্থ শরীর নিয়েও সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন।

“কিন্তু যারা বিষয়টি না জেনে এবং জেনেও একপেশেভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাদের কাছেও প্রশ্ন, ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের বা রাজনীতিক অথবা কোনো সচেতন মানুষ কি নিজ দায়িত্বে সেখানে যাবেন?”

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন অনেক মাদ্রাসা ছাত্র

শিক্ষককে হেনস্তার এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ইতোমধ্যে উঠেছে। তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনাটিকে ন্যক্কারজনক আখ্যায়িত করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরুও করেছে।

এই তদন্ত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তদন্ত কমিটির মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

সংবাদ সম্মেরনে এফবিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মনসুর আহম্মেদ ও এ এইচ আসলাম সানি, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহের শামীম, বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে।